তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) যৌথ সভা ডেকেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সভায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ আরও নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করবেন তারা।
চেয়ারপারসনের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তারেক রহমানের ফেরার প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নাগরিক শক্তির। বিশেষ করে আগামী দিনে তাদের প্রত্যাশা পূরণে তারেক রহমান তার নতুন দিনের রাজনীতিকে কীভাবে নেতৃত্ব দেন, তা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকবে। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে তিনিই মূল নেতৃত্ব হওয়ায় সবার নজর তার দিকেই বলে মনে করছে সূত্রগুলো।
২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেফতার হন তারেক রহমান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনলাইনে। দলের নেতারা মাঝে-মাঝে উল্লেখ করেছেন, তিনি প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা দলের সঙ্গে ছিলেন অনলাইনে।
স্ট্রেচারে করে শুয়ে-বসে দেশত্যাগ করেছিলেন তারেক রহমান। এবার ফিরছেন বরপুত্রের বেশে। জাতির সামনে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়ায় তারেক রহমান আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবেন—এমন আশা ব্যক্ত করলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে সমাজে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের প্রত্যাশাটার যে লক্ষ্য, তার অনেকটাই পূর্ণ হবে। দলের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ স্বাগত জানানো হবে, যেখানে আবেগ-অনুভূতির উচ্ছ্বাস থাকবে।’
ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সভায় আহ্বান জানিয়েছেন, তারেক রহমান ফেরার দিন যেন দেশ কেঁপে ওঠে।
এ নিয়ে দলের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। সোমবার যৌথ সভা করবে বিএনপি। ওই সভায় বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্ধারিত কার্যক্রম বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ছাত্রদলের তরুণ নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছোট ছোট ভিডিও করে প্রচার করছেনই।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর। তার অবস্থা যদি ভালো হয়, তাহলে বিমানবন্দর থেকে শহীদ মিনারে যেতে পারেন তারেক রহমান। যাওয়ার পথে যেতে পারেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতে।
চেয়ারপারসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে যাবেন নাকি জিয়ারত করবেন, সেটি বলার মতো সময় এখনও আসেনি।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকাল পৌনে চারটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় শায়রুল কবির খান চিকিৎসকদের বরাতে উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলেও জানান শায়রুল কবির খান।
খবর পাওয়া গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা, উন্নতি, অবনতির ওপর নির্ভর করছে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পরের কর্মসূচি। তবে একটি সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। দেশ সফর শুরু, ভোটের জন্য মানুষের কাছে তার পৌঁছানো, তার মায়ের চিকিৎসার সময় পাশে থাকা ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বাড়ি ঠিকঠাক করার কাজ চলছে। একতলা একটি বাড়ি সাদা রঙ করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশান এভিনিউ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়ির সামনে দুটি গেট। গেটের সামনে স্টিলের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। সড়কের ওপর স্থাপন করা হয়েছে তিনটি নিরাপত্তা বক্স। বাড়ির প্রাচীর ও ভিতরে রুমগুলো সাদা রঙের আবরণে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে বাড়িটির সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছেন চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। বাড়ির ভেতরে সংস্কারকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বাড়ির দক্ষিণ পাশের ৭৯ নম্বর সড়কেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাস করা ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’। বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের বাসভবন পাশাপাশি অবস্থানে। অর্থাৎ বাড়ির পূর্ব পাশের দেয়াল ও ‘ফিরোজা’র দেয়াল একসঙ্গে লাগোয়া।
দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির ভেতরে সংস্কারকাজ এখনও চলছে। নতুন দরজা-জানালা লাগানো হয়েছে। তবে সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় আসবাবপত্র আনা হয়নি।










