আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার আগে নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আওয়ামী লীগের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয়ে দিকনির্দেশনাও আসতে পারে। এমন আভাস পাওয়ার পর সরব হয়েছেন দুই অংশের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা। বিভিন্ন মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন নিজেদের প্রার্থিতা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাসা-অফিসে গিয়েও দেখা করছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগরের সম্মেলন করার রেওয়াজ রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজানো দরকার। বর্তমানে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি রাজধানীতে যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এর বিপরীতে কর্মসূচি নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে দুই অংশই শেষ করেছে ইউনিট কমিটির সম্মেলনের মতো বড় কাজ। থানা-ওয়ার্ডের সম্মেলনও শেষ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগেও চারটি ছাড়া বাকি থানার সম্মেলনগুলো শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২২ অক্টোবর সবুজবাগ এবং ২৯ অক্টোবর খিলগাঁও থানার সম্মেলন হবে। বাকি থাকা শাহবাগ ও চকবাজার থানার সম্মেলনও এ মাসেই করার চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, সম্মেলনের পাশাপাশি থানা-ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের কাজও চলছে। আগ্রহী প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি জানান, ২০ তারিখের মধ্যে আগ্রহী প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে নগরে জমা দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটির সময় আগামী ২৯ নভেম্বর শেষ হবে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বলছে, মহানগরের নেতৃত্ব ঢেলে সাজানো না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফসল ঘরে তোলা কষ্টকর হবে। বিএনপি-জামায়াত এখনই হুঙ্কার দেওয়া শুরু করেছে। তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের শোডাউন দিচ্ছে। ডিসেম্বরে ঢাকায় বড় সমাবেশের ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। রাজপথে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা ও পালটা শোডাউন দিতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই। ফলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই চান দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই নগরের দুই অংশের সম্মেলন শেষ করতে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। এদিকে সম্মেলনের আভাস পেয়েই সরব হয়েছেন নগরের দুই অংশের পদপ্রত্যাশী নেতারা। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির আবারও শীর্ষ পদে থাকতে চান। তবে গত সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদেই পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এর বাইরে বর্তমান কমিটির এক নম্বর সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল বর্তমানে সংসদ-সদস্য। নগরের শীর্ষ পদে এমপিদের না রাখার রীতি রয়েছে। দুই নম্বর সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ রায়। নগরের একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই নেতা অবিভক্ত মহানগর এবং দক্ষিণে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতি পদে তার নাম আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া শরফুদ্দিন আহমেদ সেন্টুসহ আরও কয়েকজন নেতার নামও শীর্ষ পদের প্রার্থী হিসাবে শোনা যাচ্ছে।
দক্ষিণের আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের জায়গায় দায়িত্বে আসা হুমায়ুন কবির তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। যদিও সম্প্রতি ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের কারণে তাকে শোকজ করেছিল আওয়ামী লীগ। তার জবাব দিলেও বর্তমানে অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ রয়েছেন এই নেতা। সেক্ষেত্রে আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমান কমিটির তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মোরশেদ হোসেন কামাল ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি এই পদে প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদারের নামও রয়েছে আলোচনায়। অপর দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন ও গোলাম সারওয়ার কবিরও শীর্ষ পদ চাইতে পারেন। ডা. দিলীপ রায় যুগান্তরকে বলেন, সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রভাগে ছিলাম। জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছি। নেত্রী যোগ্য মনে করে যে দায়িত্ব দেবেন সেখানেই কাজ করব। গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, আমি আজীবন নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী মনে করেছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও কর্মী হয়েই থাকতে চাই। নেত্রী ও দল আমাকে যেখানে দায়িত্ব দেবেন সেখানেই কাজ করতে চাই।
ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। সম্মেলন হলে তাদের দুজনকেই আবারও শীর্ষ পদে দেখা যেতে পারে। নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট থেকে শুরু করে থানা-ওয়ার্ড সম্মেলনও তাদের নেতৃত্বেই এখন পর্যন্ত কোনো সমালোচনা ছাড়াই শেষ হয়েছে। এর বাইরে সহ-সভাপতিদের মধ্যে আবদুল কাদের খান, ওয়াকিল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন আলোচনায় রয়েছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে হাবীব হাসান বর্তমানে সংসদ-সদস্য। আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা, মিজানুর রহমান মিজান ও এবিএম মাজহার আনাম আলোচনায় রয়েছেন। অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের দুই অংশের কয়েকজন থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে আনা হতে পারে বলেও আলোচনা রয়েছে।