ইসরায়েলি সহিংসতায় গাজা এখন ‘মৃত্যুপুরী’। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে দেশটির হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন ৪ লাখ মানুষ। গাধা ও ঘোড়ায় টানা ভ্যান, মালবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আসবাব নিয়ে শহর ছেড়েছে শত শত পরিবার। মাইলের পর মাইল দীর্ঘ হয়েছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সারি। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মিশরীয় সীমান্তে। সেখানেই আতঙ্কের কালো মেঘে জীবনের অদৃশ্য গল্প বুনছেন তারা। যে গল্পে রয়েছে মুহুর্মুহু গুলির আর্তনাদ আর হাসি-কান্নার মিশেল। ইসরায়েল আর হামাসের চলমান যুদ্ধেই মধ্যেই দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ’র এক তাঁবুতে জ্বলে ওঠে রঙিন বাতি। যে বাতির আলোতে এক হয়েছেন ফিলিস্তিনি যুগল।
বর মোহাম্মদ আল গান্দুর, আর কনে শাহাদ। মিশরীয় সীমান্তের নিকটবর্তী রাফাহ’র আশ্রয়শিবিরের তাঁবুতে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির স্বপ্ন ছিল জাঁকজমকভাবে বিয়ের আয়োজন করার। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। উল্টো ঘর-বাড়ি ছেড়ে কয়েক মাস আগে তারা আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নেন।
আল গান্দুর-শাহাদের বিয়েতে তাঁবু একটি সোনার ফ্রেমযুক্ত আয়না আর রঙিন প্রদীপে সজ্জিত হয়েছিল। সাদা পোশাক ও ঐতিহ্যবাহী সূচিকর্মে অলঙ্কৃত হিজাব পরেছিলেন নববধূ শাহাদ। সেখানেই তাকে আংটি পরিয়ে গ্রহণ করেন বর গান্দুর। চারদিকে ভয়ানক পরিস্থিতি সত্ত্বেও তাদের আত্মীয়-স্বজন বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।
নবদম্পতি জানান, তাদের বাড়িগুলো ইসরায়েলি গোলাগুলিতে ধ্বংস হয়ে গেছে, যা হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সঞ্চার করছে। আল গান্দুর বলছেন, বিয়ের অনুভূতি প্রকাশযোগ্য নয়। অনেকটা ‘তিক্ত-মিষ্টি’। পুরোমাত্রার মাত্র ৩ শতাংশ খুশি বোধ করছি। কিন্তু নববধূর জন্য ‘খুশি ভাব’ দেখানো দরকার।
বিয়ের আয়োজন খুবই ছোট পরিসরে করা হয়। কারণ খাবার স্বল্পতাও ছিল। উপস্থিত অতিথিদের দেওয়া হয় প্লাস্টিকের প্যাকেটে স্ন্যাকস। এসব খাবার তাঁবুতে অতিথিদের জন্য সাবধানে রেখেছিলেন তারা।
শাহাদের মা বিয়েতে আগত নারীদের গান গেয়ে শোনান। এ ছাড়া, ব্যাটারিচালিত প্লেয়ার থেকেও গান বাজানো হয়। যুদ্ধের আগে উভয় পরিবারই ছেলে-মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
শাহাদের মা উম্মে ইয়াহিয়া খলিফা বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল শাহাদকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর, সেরা বিয়ে দেওয়ার। যুদ্ধের আগে উভয় পরিবারই বিয়ের প্রস্তুতির জন্য ২ হাজার ডলার রেখেছিলাম। ছেলেও খুশি ছিল। কিন্তু গোলাগুলিতে সব শেষ হয়ে গেছে। যতবার মনে পড়ে সে কাঁদতে শুরু করে।