সরকারের বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে এ বছরে। মেগাপ্রকল্পগুলোর উদ্বোধন হয়েছে বছরজুড়ে। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন থেকে শুরু করে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালুÑ সবই হয়েছে এ বছরে। বলা যায়, বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ এ বছর শেষ হয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে মাওয়ার পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালু করা হয় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের একটি অংশ। গত ৪ নভেম্বর এমআরটি লাইন ৬-এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ ও ২৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সারাদেশে সড়ক ও মহাসড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য গত ১৯ অক্টোবর ১৫০ সেতু ও ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এ রুটে এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চলাচল করছে। এই রেলপথের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে হাতি চলাচলের বিশেষ পথ।
দেশের প্রথম ও বৃহত্তম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল গত ৭ অক্টোবর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একসময় বাংলাদেশই হবে সারা বিশ্বের যোগাযোগের হাব। কক্সবাজার বা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরÑ এটিই হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। সেটিই আমরা বিশ্বাস করি। সেভাবেই আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি।’
এ বছরের ১৯ অক্টোবর একসঙ্গে ১৫০ সেতু ও ১৪ ওভারপাস উদ্বোধনের ফলে যোগাযোগব্যবস্থায় স্মার্ট হাইওয়ে গড়তে এসব সেতু ও ওভারপাস ভূমিকা রাখবে। দেশের ৮ বিভাগের ৩৯ জেলায় এসব সেতু ও ওভারপাসের অবস্থান।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ১৮ থেকে ৩১ মিটার তলদেশে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। গত ২৮ অক্টোবর যানবাহন চলাচলের জন্য টানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরের দিন ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই টানেল। দেশের প্রথম এ সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ করেছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড। চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
দ্বিতল পদ্মা সেতুর ওপরতলায় চার লেনের সড়কে গত বছরের ২৫ জুন থেকে চলছে যানবাহন। এ বছরের ১০ অক্টোবর সেতুর নিচ তলায় উদ্বোধন হয় ট্রেন চলাচল। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। অন্তত ১৯ জেলার মানুষ সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছেন কেবল একটি পদ্মা সেতু চালুর কারণে। কুয়াকাটা, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যটকরা ট্রেনে চেপে যেতে পারবেন। শুধু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালালে রেলকে লোকসান গুনতে হবে। তাই এই রেলপথ ব্যবহার করে অন্তত রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকাকে যুক্ত করা হবে।
এদিকে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আর এ বছরের ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালুর ফলে অফিসগামী মানুষ অনেক খুশি। রাজধানীর গণপরিবহনে এমন একটি ব্যবস্থা একসময় ছিল চিন্তার বাইরে।