বিবিসি বাংলা: ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধারকর্মীরা বন্যায় নিখোঁজ থাকা কমপক্ষে ৪০০ মানুষের সন্ধান করছে। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়জনিত বৃষ্টির কারণে সপ্তাহ খানেক আগে যে বন্যা ও ভূমিধ্বস হয়েছে তার নীচে এদের অনেকে চাপা পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার জানিয়েছে, সুমাত্রা দ্বীপে মৃতের সংখ্যা ৪৪০ ছাড়িয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা পাঠানো হচ্ছে কিন্তু কিছু গ্রামে এখনো কিছুই পৌঁছায়নি। ফলে বেঁচে থাকার জন্য খাবার ও পানি চুরির অভিযোগ উঠছে।
মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো অঞ্চলে প্রায় নয়শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোতে।
ঘূর্ণিঝড় সেনয়ার নামের একটি অস্বাভাবিক ও অনেকটা বিরল উষ্ণমন্ডলীয় ঝড়ের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিধ্বস ও বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে ও হাজার হাজার ভবন পানিতে ডুবে গেছে।আচেহ্, উত্তর সুমাত্রা ও পশ্চিম সুমাত্রায় বহু মানুষ নিখোঁজ বলে জানিয়েছে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।
“তাপানুলি ও সিবলগার মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে শহরের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেয়া দরকার,” বলছিলেন সংস্থাটির প্রধান সুহারইয়ানতো। এএফপিকে তিনি জানিয়েছেন যে সিবলগায় সোমবারের মধ্যেই জাহাজ পৌঁছানোর কথা।বিদেশি কিছু সহায়তাও দেশটিতে পৌঁছেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আচেহ অঞ্চলে চিকিৎসা সহায়তা পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া।
পশ্চিম সুমাত্রার রাজধানী পাদাং থেকে একশাে কিলোমিটার দূরে সুংগাই নিয়ালো গ্রামে রবিবার নাগাদ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পুরো গ্রামের বাড়িঘর, যানবাহন ও ফসলের জমি কাদায় ঢেকে গেছে।
কর্তৃপক্ষ এখনো রাস্তাঘাট পরিষ্কারের কাজ শুরু করেনি বলে সেখানকার অধিবাসীরা জানিয়েছে। বাইরে থেকে কোনো সহায়তাও তাদের কাছে পৌঁছেনি।এএফপিকে ৫৫ বছর বয়সী ইদ্রিস বলেছেন “গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই সেখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা তাদের বাড়িঘর ফেলে যেতে চাননি”।
পুলিশের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে সুমাত্রায় লোকজন দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।”ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর আগে এসব লুটপাট হচ্ছে। সেখানকার মানুষ জানতোনা যে তাদের জন্য সাহায্য আসবে এবং তারা ক্ষুধা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলো,” বলছিলেন তিনি।
ওদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক বলেছেন জরুরি অবস্থায় যোগাযোগ সহায়তার জন্য ওই এলাকায় স্টারলিংক থেকে বিনামূল্যে সেবা দেয়া হবে।ওদিকে পুরো অঞ্চল জুড়েই বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।থাইল্যান্ডে বন্যায় এ পর্যন্ত ১৭০ জনের মতো মারা গেছে। মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে মালয়েশিয়া থেকেও।
শ্রীলঙ্কায় এ পর্যন্ত ৩৩০জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বন্যা ও ভূমিধ্বসের কারণে। দেশটি সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।যদিও টানা ভারি বর্ষণ এখন কিছুটা কমে গেছে, রাজধানী কলম্বোর নিচু এলাকাগুলো এখনও পানির নিচে রয়েছে এবং দেশের মধ্যাঞ্চলের অনেক এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।
ফিলিপিন্সে পরপর কয়েকটি বন্যায় দুশোর বেশি মানুষের মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বারের মতো রোববার আবারো সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
দেশটিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দুর্নীতি কিংবা অপচয় হয়েছে বলে সরকার নিজেই স্বীকার করেছে।
এ নিয়ে তৈরি হওয়া জনরোষ প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো মার্কোস জুনিয়রের প্রশাসনকে হুমকির মুখে ফেলছে।ম্যানিলায় বড় ধরনের দুটি বিক্ষোভ হয়েছে। এর একটি আয়োজন করেছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। অন্যটির আয়োজক ইউনিয়ন, ছাত্র ও বামপন্থী অধিকারকর্মীরা।
তাদেরও একই অভিযোগ যে, কেন্দ্রীয় সরকারের দেয়া বরাদ্দ দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের পকেটে গেছে। ফলে অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে অনেকে মানুষ।
তবে, কারা এর জন্য দায়ী তা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য। মার্কোস জুনিয়র কিছু রাজনীতিক ও আমলাকে বরখাস্ত করেছেন খাদ্য তহবিল থেকে চুরির অভিযোগে।
যদিও এ ধরনের এক নেতা এখন পলাতক। যিনি অভিযোগ করেছেন যে প্রেসিডেন্টের তত্ত্বাবধানেই এসব দুর্নীতি হয়েছে। মার্কোস জুনিয়র এ অভিযোগকে অপপ্রচার আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তার বোন সেনেটর ইমি মার্কোস নিজেও তার বিরোধিতায় নেমেছেন। আবার প্রেসিডেন্টের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে বলেছেন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগে বাধ্য হলে তিনি দায়িত্ব গ্রহণে প্রস্তুত আছেন।যদিও তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
তবে এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে বিক্ষোভ সামনের সপ্তাহগুলোতেও অব্যাহত থাকবে কি- না আর প্রেসিডেন্টের মিত্ররা কেউ তাকে ছেড়ে যান কি-না তার ওপর।
প্রেসিডেন্টের অবশ্য মনে থাকার কথা যে তার বাবা সহ তার দুজন পূর্বসূরি দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে প্রবল জনবিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।










