গুলশান–ধানমন্ডিতে পরিকল্পনা,খুন কলকাতায় : হারুন অর রশীদ

দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার মাধ্যমে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা অনেক দিন ধরে এই হত্যাকাণ্ডের সুযোগ খুঁজছিলেন। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ঢাকার গুলশান ও ধানমন্ডির দুটি বাসায় এক-দুই মাস ধরে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। ঢাকায় ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকায় হত্যার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কলকাতাকে।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে কৌশলে কলকাতায় নেওয়া হয়। খুনের পর হত্যাকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। কী কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে সেটি বের করা হবে। তবে এখন মূল কাজ হলো, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বের করা। এ জন্য কলকাতা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে।

‘আনোয়ারুলকে হত্যার পর লাশটি গুম করতে শরীর টুকরা টুকরা করে হাড্ডি ও মাংস আলাদা করা হয়। এরপর কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে, এ জন্য হলুদ মিশিয়ে ব্যাগে ভরে ওই বাসা থেকে বের করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় মরদেহের খণ্ডিত অংশ ফেলা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’ আনোয়ারুল আজীমের পুরো লাশ না পাওয়া গেলেও খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যাবে মনে করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার আমানুল্লাহর প্রকৃত নাম শিমুল ভুঁইয়া বলে জানান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি আরও বলেন, নতুন পাসপোর্ট করে তিনি এই নাম ধারণ করেছেন। তিনি চরমপন্থী দলের নেতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো হত্যা ও অস্ত্র মামলা আছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতের পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাঁদের একটি দল বাংলাদেশে আসছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে হয়তো বাংলাদেশ পুলিশের একটি দলও সেখানে যাবে।

ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। বিষয়টি সামনে এলে শুরু হয় নানা আলোচনা। বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক গা শিঁউরে ওঠা তথ্য।

আনার হত্যার ঘটনা নিয়ে ভারতের পুলিশের একটি দল কাজ করছে। সেই সঙ্গে কাজ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও (ডিবি)। তদন্তে এখন পর্যন্ত অনেক তথ্য জানা গেছে বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

শাহীন গত ৩০ এপ্রিল আমানুল্লাহকে নিয়ে কলকাতায় যান। সংসদ সদস্য আনার হত্যার ছক কষেন ওই ফ্ল্যাটে বসেই। এরপর সেখান থেকে ১০ মে দেশে ফেরেন শাহীন। তখন ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান, মূল কিলার আমানুল্লাহ, জিহাদ, সিয়াম, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল শাহীনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন।

১৩ মে রাতে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করে আমানুল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল দেশে ফেরেন। তাদের আটকের পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক কাহিনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর আনারকে শাহীনের টাকার জন্য চাপ দেন আমানুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরেন আমানুল্লাহ। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।

আনারের লাশের টুকরোগুলো কোথায়, তা জানার চেষ্টা চলছে। এ জন্য আমানুল্লাহকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেছেন, ফ্ল্যাট থেকে লাশের টুকরো ভর্তি ট্রলি বের করার পর কয়েক ব্যক্তির হাত ঘুরে গুম করা হয়েছে।