ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য দু-তিন মাস আগেই পরিকল্পনা করা হয়। রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাসায় খুনের ছক কষা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ।
হারুন বলেন, বাংলাদেশ থেকে তিনজন সেই বাসায় অবস্থান করেন। আর বাকি এ দেশেরই দুজনকে ভারত থেকে ঠিক করা হয়। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়। মরদেহের হাড় ও মাংস আলাদা করে ব্রিফকেসে করে গুম করার চেষ্টা করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কলকাতা পুলিশ জানান, লাশের হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর হাড়গুলো একটি ব্রিফকেসে করে বাইরে নিয়ে যান। তারপর মাংসগুলো আলাদা করে নিয়ে যান। এমনকি কেউ যেন সন্দেহ না করতে পারেন, তার জন্য মাংসের মধ্যে হলুদ লাগিয়ে নেন।
কলকাতায় আনোয়ারুল যে বাড়িতে উঠেছিলেন, সেটির সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ ও ১৫ মে সেই বাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছেন।
এদিকে ,সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় লাল গাড়ির পর এবার একটি সাদা গাড়িকে চালকসহ আটক করা হয়েছে। আনারের মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে এই গাড়িতে করেই পাচার করা হয় বলে পুলিশের ধারণা।
বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশ কলকাতার ভাঙ্গড় থেকে WB 04 G5839 নম্বরের গাড়িটিকে জব্দ করেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলছেন, সাদা গাড়িটি অ্যাপভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করত। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির মহাপরিদর্শক অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, অ্যাকুইটিকা কমপ্লেক্সের গেটে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ১৩ মে এমপি আনার এক নারী ও দুই পুরুষের সঙ্গে ওই কমপ্লেক্সে প্রবেশ করছেন। প্রবেশের পর তাঁকে বের হতে দেখা যায়নি।
১৩ ও ১৫ মের মধ্যে ওই নারী এবং দুই পুরুষকে বাড়িটি থেকে একাধিকবার বের হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে তাঁদের অন্তত দুজনকে বড় বড় ব্যাগ হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠতে দেখা গেছে। ব্যাগ নিয়ে তাঁরা যে গাড়িতে উঠেছিলেন, সেটা ছিল উবারের ভাড়া করা গাড়ি। ধারণা করা হচ্ছে, সেই গাড়ির রং সাদা। যে গাড়িতে করে এমপি আনার এক নারী ও দুই পুরুষের সঙ্গে কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা কমপ্লেক্সের ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে ঢুকেছিল, গতকাল বুধবার রাতে লাল রঙের সেই গাড়ি চালকসহ আটক করেছে।
দুটি গাড়ির ফরেনসিক পরীক্ষা করছে কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি গাড়ির চালকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা এলাকার এই ডুপ্লেক্স বাড়িতেই এমপি আনারকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়ির মালিক রাজ্য শুল্ক বিভাগের কর্মচারী সঞ্জীব ঘোষ। তিনি মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানকে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন।
আখতারুজ্জামানই এই খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’। খুনের পর নারী সঙ্গীকে নিয়ে দুবাই পাড়ি দিয়েছেন। এর আগে গতকাল বুধবার সকালে কলকাতা বিধাননগর, ব্যারাকপুর পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্সের সদস্যরা বাড়িটিতে তল্লাশি চালান।
এদিকে, কলকাতায় এমপির বন্ধু গোপাল বিশ্বাস সম্পর্কেও খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ। এমপির দীর্ঘদিনের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বরানগরের মণ্ডলপাড়া লেনের একটি বাড়িতে থাকেন। সেই বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। তাঁর ছেলে ও স্ত্রী অন্য বাড়িতে থাকেন। তাঁর এক ছেলে চিকিৎসক। গোপাল এলাকায় কারও সঙ্গে মিশতেন না বলে জানা গেছে।