স্পোর্টস ডেস্কঃ আজ বৈশ্বিক আসর বসছে ভারতের গুজরাট রাজ্যের বৃহত্তম শহর এবং সাবেক রাজধানী আহমেদাবাদে। সবরমতি নদীর শহর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ত্রয়োদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। অর্থাৎ, চার বছর আগে যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই শুরু। উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনালের ভেন্যু নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু। সংস্কার করার পর এর দর্শক ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজারে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সফরে এসে এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারতে সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয় গুজরাটে। এজন্য এই শহরকে বলা হয় ‘ম্যানচেস্টার অব ইন্ডিয়া’। সেই শহরে ১০০ ওভারের ক্রিকেট ম্যাচের ফিতে কাটা হবে। বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে শুরু উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে ৪৬ দিনের রোমাঞ্চ-শিহরণ, উন্মাদনা-উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে। যার সমাপ্তি ১৯ নভেম্বর সেই আহমেদাবাদেই। শুরু ও শেষ একই শহরে। ভারতের ১০টি ভেন্যুতে ৪৬ দিনে ৪৮ ম্যাচে ১০টি দল ব্যাট-বলের খেলার সৌকর্য ও গরিমা উন্মোচনে নিজেদের সামর্থ্যরে সবটুকু নিংড়ে দিতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবে না। অংশ নেওয়া ১০টি দল হলো-পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও স্বাগতিক ভারত। এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো এই যে, প্রথম দুবারের (১৯৭৫ ও ১৯৭৯) চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ নেই। বাছাইপর্বের বৈতরণী পার হতে ব্যর্থ হয় একসময়ের দাপুটে ক্যারিবীয়রা। এ যেন অনেকটা ‘ফুলের জলসায় নীরব কবি’র মতো।
এদিকে সাকিব-তামিম বিরোধ-উত্তর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু হবে ৭ অক্টোবর ধর্মশালায়, আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে। এই ম্যাচ শুরু হবে বেলা ১১টায়। হিমাচল প্রদেশের শীতকালীন রাজধানী, ছবির মতো সুন্দর পর্বতের শহর ধর্মশালায় সাকিব-নাজমুলরা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবেন ১০ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ৪৮ বছরের ইতিহাস অনেক চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, বিতর্ক-বিপর্যয়ে ঋদ্ধ। দুবারের শিরোপাজয়ী (১৯৮৩ ও ২০১১) ভারত এবারের আয়োজক দেশ। যারা শেষবার ২০১১ সালে স্বভূমিতে এই সংস্করণের বিশ্বকাপ জিতেছিল অল-এশিয়ান ফাইনালে শ্রীলংকাকে ছয় উইকেটে হারিয়ে। ফাইনালের প্রসঙ্গ যখন উঠল, গতবারের কথা বলতেই হয়। চার বছর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার কথা নয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। লর্ডসে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল টাই হয়। সুপার ওভারেও ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়নি। অর্থাৎ, টাই। হাস্যকর এক সিদ্ধান্তে বেশি বাউন্ডারি মারার সুবাদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। আর নিউজিল্যান্ডের সম্বল হয় কান্না। সুখের বিষয়, এবার বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। নতুন নিয়মে এখন থেকে ম্যাচের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যতবার টাই হবে ততবার সুপার ওভার চলবে।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপে প্রথম অংশগ্রহণ করে ১৯৯৯ সালে। অভিষেকেই স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখায় বাংলাদেশ। সেই হিরণ¥য় সাফল্য পরের বছর বাংলাদেশকে টেস্ট পরিবারের সদস্য হতে সহায়তা করে। পরের পাঁচ আসরে বাংলাদেশ শুধু ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের সহায়তায়। এছাড়া ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছিল ভারতকে হারিয়ে।
একদিবসী ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরে সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ১২ আসরের মধ্যে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাঁচবার। ২০০৭-এ শেষ হাসি হাসার মধ্য দিয়ে প্রথম দল হিসাবে তারা টানা তিনটি বিশ্বকাপ জেতার গৌরব অর্জন করে। ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান (১৯৯২), শ্রীলংকা (১৯৯৬) এবং ইংল্যান্ড (২০১৯) একবার করে শিরোপার স্পর্শ পায়।
এবারে বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর আগে একাধিকবার সূচি পরিবর্তন, ভিসা জটিলতা, পাকিস্তান দলের ভেন্যু নিয়ে আপত্তি-সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে সমালোচনায় বিদ্ধ হয় ভারত। জৌলুশপূর্ণ আয়োজনে অন্য আসরগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল ভারতের। কিন্তু শুরুতেই গলদ। শোনা গিয়েছিল উদ্বোধনীতে বিশ্বকে চমকে দেবে তারা। বলিউডের রথী-মহারথীরা থাকবেন। উপস্থাপন করা হবে ভারতের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, টেননিক্যাল কারণে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি ভারত।