অনেকেই মনে করেন, টয়লেট ফ্লাশ করার সময় কমোডের ঢাকনা নামিয়ে রাখলেই বুঝি স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি বজায় থাকে। বিজ্ঞান বলছে, আসল ব্যাপারটা বেশ জটিল। ‘আমেরিকান জার্নাল অব ইনফেকশন কন্ট্রোল’-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, টয়লেট ফ্লাশ করার আগে কমোডের ঢাকনা নামিয়ে রাখলেও বাথরুমের বিভিন্ন পৃষ্ঠে বায়ুবাহিত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার তেমন উল্লেখযোগ্য হারে কমে না। তাহলে উপায়?
ব্যবহারের পর টয়লেট ফ্লাশ করলেই ভেতরে পানির প্রচণ্ড চাপ ও ধাক্কা লাগে। সেই ধাক্কার কারণে নোংরা পানির ক্ষুদ্র কণা হাওয়ায় ভেসে যায়। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে বলেন ‘ফ্লাশিং প্লুম’।
কমোডের ঢাকনা খোলা রেখে ফ্লাশ করলে এসব কণা টয়লেট থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত দূরে যেতে পারে। এসব অদৃশ্য কণা কিন্তু শুধু মেঝেতে গিয়েই পড়ে না, টয়লেটের সিংক, তাক, এমনকি টুথব্রাশের ওপরেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ জন্য অনেকেই ফ্লাশ করার আগে ঢাকনা নামিয়ে দেন। তাঁরা মনে করেন, ঢাকনাই সব জীবাণু আটকে দেবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, ঢাকনা নামানো থাকলেও জীবাণুর খুব ছোট কণাগুলো ঢাকনার ফাঁকফোকর দিয়ে ঠিকই বেরিয়ে আসে।
তাই শুধু ঢাকনা নামিয়ে রেখে জীবাণুর বিস্তার পুরোপুরি রোধ করা বা বাথরুম পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না। বিশেষ করে ছোট বাথরুমে, যেখানে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা কম। কেননা ফ্লাশ করার পর যখন জীবাণুগুলো বাতাসে ছড়ায়, তখন তা দ্রুত বাথরুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না।
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কমোডের ঢাকনা নামিয়ে রাখলে দৃশ্যমান ছিটকে আসা পানির পরিমাণ ঠিকই কমে। কিন্তু এতে ক্ষুদ্র জীবাণুর কণার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে না। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষার সামগ্রিক সুবিধার জন্য ঢাকনা নামিয়ে রাখাই উত্তম।
কমোডের ঢাকনা কি সব সময় নামিয়ে রাখা ভালো
জীবাণু মোকাবিলার এটি একমাত্র উপায় নয়। তারপরও কমোডের ঢাকনা সব সময় নামিয়ে রাখা ভালো। আরও যেসব কারণে ঢাকনা নামিয়ে রাখবেন—
ঢাকনা নামিয়ে রাখলে ফ্লাশ করার সময় বড় ফোঁটার পানি ছিটকে বাইরে আসে না।
ঢাকনা নামিয়ে রাখলে বাতাসে ভেসে জীবাণুর কণা থেকে টুথব্রাশ, রেজর বা তোয়ালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে পড়বে কম।
কমোডের ঢাকনা নামানো থাকলে বাথরুমের দুর্গন্ধ সহজে বাইরে আসে না। আর দেখতেও তুলনামূলক ভালো দেখায়।
অতিথি আপনার বাথরুম ব্যবহার করার সময় কমোডের ঢাকনা নামানো দেখলে পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার একটা ইঙ্গিত পান। এতে তাঁরা স্বস্তি বোধ করেন এবং নিশ্চিত হন বাথরুমটি পরিচ্ছন্ন।
হ্যাঁ, কমোডের ঢাকনা তুলে রাখলে আপনি অবশ্যই অসুস্থ হতে পারেন। ফ্লাশ করার সময় জীবাণুর কণাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং টয়লেটের আশপাশের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের ওপর জমা হয়।
যাঁদের পোষা প্রাণী আছে, তাঁদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। কারণ, পোষা প্রাণী বাথরুমে থাকা জীবাণুর সংস্পর্শে এসে আপনার কাছে এলে জীবাণু স্থানান্তরের মাধ্যমে আপনার পেটে সংক্রমণ, ত্বক বা চোখের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
কমোডের এই দুই ফ্লাশ বাটনের কাজ কী, এর সঠিক ব্যবহার এত জরুরি কেন
কমোডের ঢাকনা নামিয়ে রাখলেও জীবাণু রোধে করণীয়
যদি স্বাস্থ্যই আপনার প্রধান চিন্তা বিষয় হয়, তাহলে শুধু ঢাকনার দিকে নজর না দিয়ে এসব কাজ করা জরুরি—
টয়লেট সিট, ফ্লাশ বাটন, দরজার হাতল ও ট্যাপ—এসব স্পর্শকাতর স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়াই সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়।
বাথরুমে বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা রাখুন, যাতে বায়ুবাহিত কণাগুলো দ্রুত বেরিয়ে যায়।
অবি/










