মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চলমান সংঘাত বাড়লে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। ফলে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার।
এ অঞ্চলে সংঘাত আরও বাড়লে জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম বেড়ে ৯২ ডলারে উন্নীত হতে পারে। সংঘাতের কারণে সরবরাহব্যবস্থায় গুরুতর ব্যাঘাত ঘটলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ছাড়িয়ে যেতে পারে ১০০ ডলার। তখন বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে এক শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক, এপ্রিল ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে এমন পূর্বাভাস। প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় চলমান সংঘাত আর সম্প্রসারিত না হলে বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম আরও কিছুটা কমে আসবে। তবে তা করোনার আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি থাকবে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আর না বাড়লে চলতি বছর বৈশ্বিকভাবে সব ধরনের পণ্যমূল্য গড়ে ৩ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে গড়ে ৪ শতাংশ কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালি দিয়ে তরল জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ পরিবহণ করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সংঘাত বাড়লে এ প্রণালি দিয়ে পণ্য পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বাধার ধরনের ওপর নির্ভর করে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের সরবরাহ যেমন বিঘ্ন ঘটতে পারে, তেমনই এর দামও প্রভাবিত হতে পারে; যা উসকে দিতে পারে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হারকে। এতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে এক শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির যে নিম্নমুখিতা, তা বাধাগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার কমানোর পরিকল্পনাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বাড়ায় চলতি মাসে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ৮২ থেকে বেড়ে ৯১ ডলারে উঠেছে। সংঘাত সম্প্রসারিত না হলে জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছর ৮৪ ডলারের মধ্যে থাকতে পারে। আগামী বছর এর দাম ৭৯ ডলারে নামতে পারে। আর সংঘাত যদি আরও বাড়তে থাকে, জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। তখন প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ৯২ ডলারে ওঠতে পারে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি পরিবহণ আরও বাধাগ্রস্ত হলে প্রতি ব্যারেলের দাম ছাড়িয়েও যেতে পারে ১০০ ডলার। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস, সার এবং খাদ্যের দামও বাড়তে পারে। এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হলে সারের দামও যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে, সম্ভবত বাড়বে খাদ্যের দাম।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অব্যাহত আক্রমণকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় উত্তেজনা চলছে। এর সঙ্গে লেবানন ও ইরান জড়িয়ে পড়েছে। এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ওমান উপসাগরের হরমুজ প্রণালিতে দুটি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য দায়ী করেছে ইরানকে। ইরান তা অস্বীকার করেছে।হরমুজ প্রণালি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পণ্য আদান-প্রদানের অন্যতম একটি সহজ সমুদ্রপথ। এ প্রণালির একদিকে আরব দেশগুলো এবং অন্যপাশে রয়েছে ইরান।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত সীমিত থাকলে বিশ্বে সামগ্রিকভাবে খাদ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে। এর মধ্যে শুধু খাদ্য উপকরণের দাম চলতি বছর ৬ শতাংশ এবং আগামী বছর ৪ শতাংশ কমতে পারে। সারের দাম চলতি বছর ২২ এবং আগামী বছর ৬ শতাংশ কমতে পারে। পণ্যমূল্য নিম্নমুখী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পর্যায়ক্রমে ঋণের সুদের হারও কমাতে পারবে। তবে পণ্যের দাম কমলেও করোনা মহামারির আগের পাঁচ বছরের চেয়ে পণ্যের দাম গড়ে ৩৮ শতাংশ বেশি থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের মধ্যেও বৈশ্বিকভাবে পণ্যমূল্য কমছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারও নিম্নমুখী। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এতে ওই সময়ের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে ২ শতাংশ।