গাজার স্থল হামলায় ভয়ংকর বিপদ ইসরাইলের। কারণ, গাজায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গাজা প্রতিরক্ষায় জোর প্রস্তুতি নিয়েছে হামাস। শত্রুরাষ্ট্র ইসরাইল ধ্বংসে রকেট, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক, ড্রোন, টানেল, স্নাইপার সবকিছু নিয়েই পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে আছে। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বাহিনী হামাস ইসরাইলে ৭ অক্টোবর আচমকা অভিযানের পর ভয়ংকর পালটা হামলা শুরু করেছে ইসরাইলও। হামাসের সামরিক ক্ষমতা ধ্বংসের মিশনে গাজায় স্থল হামলার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার নতুন এক বিবৃতিতে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত জানিয়েছেন, গাজার সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয় সেনাবাহিনী। শিগগিরই ঢুকে পড়বে গাজায়।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ইসরাইল প্রকৃতপক্ষেই যদি গাজায় স্থল হামলা চালায় তাহলে ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সিআইএ’র সাবেক প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস বলছেন, ‘অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি স্থল অভিযান দীর্ঘায়িত হতে পারে কয়েক বছর এমনকি এক যুগ পর্যন্ত।’
গাজার জনসংখ্যা ও সরু রাস্তা: স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে গাজার জনসংখ্যার ঘনত্ব। মাত্র ৩৬৩ বর্গকিলোমিটারের এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করে। আক্রমণের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি হতে পারে। ফলে অযোদ্ধাদের সংখ্যাও বেশি হতে পারে, যা তাদের জন্য বিপজ্জনক। গাজার সরু রাস্তাও হতে পারে ইসরাইলের মৃত্যুফাঁদ। কারণ, গাজা উপত্যকার রাস্তা সরু হওয়ায় ইসরাইলি বাহিনীর জন্য অস্ত্রবাহী ট্যাঙ্কগুলো পরিচালনা করা অনেক কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সহজেই স্নাইপার আক্রমণের শিকার হতে পারে।
রকেট: হামাসের যথেষ্ট পরিমাণ রকেট রয়েছে। ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের কাছে ৮ হাজারেরও বেশি রকেট রয়েছে। গত দুই বছরে এটি তার মজুত না বাড়ালেও আইডিএফ বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য তাদের কাছে হাজার হাজার রকেট রয়েছে।
ড্রোন: হামাসের ড্রোন আইডিএফ বাহিনীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস তার চলমান হামলায় ড্রোন ব্যবহার করার ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাদের দেখানো ড্রোনগুলো ইউক্রেনে রুশ হামলায় ব্যবহৃত ইরানি ড্রোনগুলোর অনুরূপ। সাম্প্রতিক যুদ্ধে বেশি মাত্রায় ড্রোন অন্তর্ভুক্ত করেছে।
৫০০ কিলোমিটারের সুড়ঙ্গ: ইসরাইলের সব থেকে বড় ভয় গাজার ৫০০ কিলোমিটারের সুড়ঙ্গ (টানেল) ফাঁদ। ভূপৃষ্ঠের নিচে কয়েকশ টানেল রয়েছে, যা হামাসের আশ্রয়স্থল ও অস্ত্রাগার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইডিএফ ও স্থল বাহিনীর ওপর আশ্চর্যজনক আক্রমণ চালানোর জন্য এই টানেলগুলো যথেষ্ট। অনেকেই ধারণা করছেন, সুড়ঙ্গের ভয়েই স্থল হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে না ইসরাইল।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: হেলিকপ্টার সহায়তা নেওয়াও কঠিন হবে ইসরাইলের জন্য। কারণ, হামাসের কাছে সহজে বহনযোগ্য নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মুবার-১ রয়েছে। যা ইতোমধ্যে ইসরাইলের ৪টি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। এছাড়াও এসএ-৭, এসএ-১৮ এবং এসএ-২৪ এর মতো বিভিন্ন ধরনের ম্যান-পোর্ট এয়ার ডিফেন্স রয়েছে। এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ইসরাইলি স্থল বাহিনীর ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে।
অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল: হামাসে প্রচুর রাশিয়ান অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইলও রয়েছে। যেগুলোর ভয়ে এখনো গুটিয়ে আছে ইসরাইল। সহজে বহনযোগ্য মিসাইলগুলো নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে পারে ইসরাইলের পদাতিক ও ট্যাঙ্কবহর।
শক্তিশালী পয়েন্ট এবং স্নাইপার: হামাস যুদ্ধের জন্য শক্তিশালী পয়েন্ট এবং স্নাইপারের ওপর নির্ভর করে। শক্তিশালী পয়েন্টগুলো থেকে ২০১৪ সালে হামাস ইসরাইলি বাহিনীর ওপর রকেট, মর্টার, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক, গাইডেড মিসাইল, রকেটচালিত গ্রেনেড, মেশিনগান নিক্ষেপ করেছিল। আবারও শক্তিশালী পয়েন্ট ও স্নাইপারের মুখোমুখি হতে পারে ইসরাইল, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।