কিছুদিন আগেও অজবালার একটি পরিবার, নিজের বাড়িসহ চাষের জমি এবং গবাদি পশুসহ সবই ছিল। এক সময় তার একটি সুখী পরিবার ছিল তার । কয়েক বছরের ব্যবধানে আজ তিনি স্বামী ও পরিবারকে হারিয়েছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্রতার কারণে একমাত্র মেয়েও রোগে ভুগছেন।
এখন তাই, হাতে লাঠি কাঁধে ভিক্ষের ঝুলি তার। বয়স ৮১ ছুঁই ছুঁই। জীবনের ৮০ বছর যথারীতি কেটে গেছে। চোখে ঠিকমত দেখতে পান না। এক সময় মেয়ে ও স্বামী সংসার নিয়ে আনন্দে ভরপুর ছিল তার সংসার। কালের বিবর্তনে সবই ওলট-পালট হয়ে গেছে। একাকিত্ব, হাহাকার, আর্তনাদ সবটাই গ্রাস করেছে তাকে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পরনে পুরোনো বিবর্ণ ধুসর সাদা কাপড়ের ধুতি। বেশভুষায় বোঝাযায় কষ্টে আছেন । মেয়ের বিয়ে দেয়ার কিছুদিন পরেই স্বামী হাঁপানী রোগে মারা যায়।
স্বামীর চিকিৎসা আর মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তার। মেয়ের জামাই মাঝে মধ্যে যে সহযোগিতা করত কিছুদিন ধরে সে মেয়ে ও জামাই দুজনেই জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন সেটাও বন্ধ। বয়সের ভারে ও বার্ধক্য জনিত কারনে কাজে ডাকেনা প্রতিবেশীরা । সরকারী সুযোগ সুবিধা বলতে জুটেছে বিধবা ভাতা। সেই টাকায় চলে খাওয়া দাওয়া, কাপর চোপর, আর ঔষধ কেনা। নিজের নেই কোন জমি জমা। অন্যের জমির গোয়ালঘর সংলগ্ন ঝুপড়ি ঘর তুলে করছেন বসবাস। সে ঘরেই একপাশে থাকার বিছানা আর অন্যপাশে রান্না করার চুলা ও পাতিল,পাশেই, ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে রান্নার কিছু লাকড়ি। ঘরের টিনের চালা ও বেড়ায় চারদিক অসংখ্য (ছিদ্র) ফুটা সেগুলো আটকানো আছে তারেই ব্যবহৃত পুরানো ছেড়া নোংরা সাদা কাপড়ে। সামান্য বৃষ্টিতে পানিপরে বিছানা ভিজে যায়। ঘরের বেড়ার ফুটা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে যে কারনে ঘুমাতে পারেন ঘরে। কি ঘুম কি জেগে থাকা এ ভাবে কাটে তাঁর রাত। পানি পানের নেই কোন টিউবওয়েল, না আছে পায়খানা। যুগ যুগ ধরে এ ভাবেই চলছে তার জীবন। বলছি ডোমার উপজেলার হরিনচড়া ইউনিয়ন হংসরাজ গ্রামের মৃত ইলাম রায়ের স্ত্রী অজবালার কথা। অজবালা ছল ছল চোঁখে কান্না জরিত হৃদয়ে বলেন হামার প্রধানমন্ত্রী শেখের ব্যটি গরীব মানুষোক পাকা ঘর দিছে। মোক একটা ব্যবস্থা করিদেও বাবা এমন ঠান্ডায় আমি বোধ হয় আর বাজবো না । এই শেষ বয়সে এসে খেয়ে হোক বা না খেয়ে হোক দিনের শেষে নিশ্চিন্তে নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমাতে পারি। পৃথিবীতে আমাকে দেখার কেউ নেই। মারা গেলে কি হবে কে জানে। আর কেউ না থাকায় নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচাতে নিয়েছি ভিক্ষা বৃত্তি পেশা। এ কাজটা করতে চাই নি, নিরুপায় হয়ে করছি।
তার ইচ্ছা নির্ ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চান তিনি।
তিনি জানান, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘর চাই। যেন সারাদিনের ক্লান্তির শেষে নিরবিঘ্নে নিজ বাসস্থানে গিয়ে ঘুমাতে পারি। আমার একটা আশ্রয় চাই। শুনেছি এলাকায় অনেক মানুষ ঘর পাইছে। আমাক একটি ঘর দেন বাবা বাব বার এমন আকুতি তার।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল রানা বলেন আমার নির্বাচিত হওয়ার এক বছর মাত্র। এখন ও কোন ঘরের বরাদ্দ পাইনি। তবে বরাদ্দ পেলে এমন মানুষের অগ্রাধিকার সবার আগে থাকবে।
এ বিষয়ে কথা হলে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি তাকে আবেদন করতে বলেন এবং ঘরের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।