যাদব চন্দ্র রায়,বিভাগীয় ব্যুরো চীফ, রংপুর : দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষন ও হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামী সাইফুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মামলার রায় হওয়ায় পল্লীশ্রীর পক্ষ থেকে সন্তুুষ্টি প্রকাশ, উচ্চ আদালতে এ রায় যেন বহাল থাকে এবং শিশুর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আাসা পর্যন্ত সর্বস্তরের ব্যাক্তিরা যেন পাশে থাকেন তাই আজ ১১জানুয়ারী ২০২২ তারিখে পল্লীশ্রীর আয়োজনে প্রেসক্লাব দিনাজপুর এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিশুর মা দীপালী রাণী রায় ও তার নানী সনেকা রায় উপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৮ই অক্টোবর। পার্বতীপুরের ৫ বছরের শিশুকে খেলার মাঠ থেকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বাড়ীর পাশের সাইফুল শিশুকে ধর্ষণ করে, মুখে লাগানো হয় টেপ ,হাত পা বাঁধা হয় এবং ব্লেড দিয়ে চিরে দেওয়া হয় তার যৌনাঙ্গ।পুরো একদিন পর মৃত ভেবে তাকে ফেলে দেওয়া হয় পাশের ঝোপে।২০১৬ সালে ২০ অক্টোবর পার্বতীপুর মডেল থানায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৭/৯(৪) ক/৩০ ধারায় মামলা করে। ২৪ তারিখ আসামী গ্রেফতার হয় পুলিশ চার্জশীট দেয় ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী। মামলার সাক্ষী শুরু হয় ঐ বছরই ১৮ ই নভেম্বর। তখন থেকেই দিনাজপুরের উন্নয়ন সংস্থা পল্লীশ্রী, শিশু ও তার পরিবারের পাশে থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে এবং আইনী সেবা গ্রহনের জন্য সহযোগিতা করে।পরে তার পাশে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ জোট-আমরাই পারি সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। পূজার শারিরীক অবস্থার অবনতি ও চিকিৎসার প্রয়োজন হলে প্রথমে রংপুর ও পরে ঢাকায় তাকে ঢাকা শেরে বাংলা নগরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কিডনী ডিজিজেস এ্যান্ড ইউরোলোজি হাসপাতালের অধ্যাপক মোঃ মিজানুর রহমানের তত্বাবধানে এবং সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ফয়সাল এর সহায়তায় শিশুটির চিকিৎসা চলমান থাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দাতা সংস্থা নেটজ বাংলাদেশ ও রিইব -আর্থিক সহযোগীতায় এগিয়ে আসে।
১০/০১/২০২১ দুপুর ১.৫৫ মিনিটে দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের মহামান্য বিচারক প্রধান আসামী সাইফুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আর দ্বিতীয় আসামী আফজাল হোসেন কে বেকসুর খালাস দিয়েছেন । মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী মাজহারুল ইসলাম এবং আইনজীবি তৈয়বা বেগমের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এই অর্জন। শিশুটির পাশে থাকা জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন,আইনজীবী, গণমাধ্যম, বিভিন্ন সংগঠন জোট,সুশিল সমাজ,দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম, নেটজ বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আমরাই পারি জাতীয় জোট সহ সকলের জন্য পল্লীশ্রীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা, কারন এ অর্জন আমাদের সকলের। মামলার রায় শুনে শিশুটির বাবা আবেগে আপ্লুত হয়ে পল্লীশ্রী চত্বরে ছুটে আসেন, কাঁন্নায় ভেঁঙে পড়েন আর বলেন আজ আপনারা পাশে ছিলেন বলেই আমার মেয়ের প্রতি অন্যায় কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, তিনি আরো বলেন , আমি শক্তি হারাই নাই,বাবা হয়েও কষ্ট সহ্য করে বিচারের জন্য এগিয়ে গেছি। এখনো আমার মেয়ে অসুস্থ,হয়ত সে পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থ হবে না, তবুও একটু হলেও শান্তি পাচ্ছি বিচারের রায় পেয়ে। আর কখনো কোনো শিশু যেন এধরনের নির্যাতনের শিকার না হয়।