তোফায়েল হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ বৃদ্ধ কুদ্দুস আকন্দের বয়স ছুঁইছুঁই। গ্রামীন ঐতিহ্যকে আকড়ে ধরে রাখায় তার প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষে বিক্রি করে চলেছেন মাটির হাড়ি-পাতিলসহ বাঁশের পণ্যসামগ্রী। এসব পণ্য উচ্চ-মধ্যবিত্ত¡রা না কিনলেও গরীবের চাহিদা প্রচুর। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করে সংসার চলছে ওই বৃদ্ধের।
সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরস্থ ডিসি রাস্তা ঘেঁষে উত্তর পাশের দোকানে বসে থাকতে দেখা যায় কুদ্দুস আকন্দকে। এখানে ছিন্নমূল পরিবারের বেশ কিছু মানুষ কিনছিলেন মাটির হাড়ি-পাতিল ও অন্যান্য সামগ্রী। আবার কেউ কেউ বাঁশের তৈরী ঝাড়–-ডালা ও খোঁচা ক্রয়ও করছিলেন।
জানা যায়, ওই উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তরফ বাজিত গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস আকন্দ। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে তার। এরপর যুবক বয়সে হাল ধরেছিলেন পিতার সংসারে। জীবিকার তাগিদে শুরু করে প্যাডেল চালিত রিকশা ও বাইসাইকেল মেরামতের কাজ। এ কাজটি করা অবস্থায় শুরু হয় নতুন দাম্পত্য জীবন। এ জীবনে ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক। প্রায় ৪০ বছর ওইসব ওই কাজটি করেন। সেটি আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাজের গতি কমে যায়। ফলে এখান থেকে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে তার। বাধ্য হয়ে নতুন কর্মজীবনের পরিকল্পনা নেন কুদ্দুস আকন্দ। গ্রামীন ঐতিহ্য যেন বিলুপ্তি না হয়, সেই চিন্তা থেকে শুরু করে মাটি ও বাঁশের তৈরী পণ্যসামগ্রী বিক্রির দোকান। তার দোকানে রয়েছে মাটির হাড়ি, পাতিল, বাটা, কাসা প্রভুতি। এছাড়া বাঁশের তৈরী, ডালা, ডালি, কোলো, চালোন, খোঁচা, ঝাড়–সহ আরও অনেক জিনিসপত্র। একমাত্র গ্রামীন ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে এবং গরীব মানুষের চাহিদা পূরণে এই ব্যবসাটি প্রায় ২৫ বছর ধরে অব্যাহত রেখেছেন। ক্ষুদ্র এই ব্যবসার লাভের টাকায় চলছে তার পরিবারের জীবিকা। এরই মধ্যে বার্ধ্যক্য বয়স আর ওইসব পণ্য ক্রেতার চাহিদা কমে যাওয়ায় কোনমতে ধরে রেখেছেন ব্যবসাটি।
ওই দোকানে আসা রিকশা চালক নজরুল ইসলাম বলেন, আয়-রোজগার কম থাকা বেশী দামে অত্যধুনিক পণ্য কেনা সম্ভব নয়। তাই কুদ্দুস চাচার দোকানে দুটি পাতিল ও একটি কাসা কিনলাম। প্রায়ই এখান থেকে কিছু মাটি ও বাঁশের জিনিসিপত্র কেনাকাটা করি। আরেক ক্রেতা জানান, বাড়িতে হাস-মুরগী পালন করেন তিনি। এগুলোর জন্য একটি বাঁশের খোঁচা ও আরেকটি ডালি কিনেছেন।