আলোকিত স্বদেশ রিপোর্ট:
সুমনা বয়স ৮ বছর, ৩ দিন যাবৎ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ৩ দিন আগে গভীর রাতে কে যেনো সুমির ঘরের জানালায় শব্দ করে। সুমনা ও তার ছোট খালা ভয় পেয়ে ঘুম থেকে উঠে যায়। এরপর আবারও জানালায় প্রচন্ড একটা শব্দ হয়। সুমনা সেই শব্দে ভয় পেয়ে খেই হারিয়ে বিছানা থেকে পড়ে যায়।
এরপর সারারাত তারা দুজনে ঘুমোয়নি। ভয়ে দুজনে থর থর কাঁপতে থাকে।
ঘটনার পরদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় তিন দিন সুমনার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে। পরিচিত অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয়ে চিৎকার দেয়। উল্টোপাল্টা কথা বলে। কিছুক্ষণ পর পর ভয়ে কেঁপে উঠে।
সবাই বলেছে মোল্লা, কবিরাজ দেখাতে।
তারা দেখিয়েছেন। মোল্লা কবিরাজ বলেছে সুমনাকে ভুতে ধরেছে। তেল পড়া, এবং গলা ওবমাথায় তাবিজ দিয়েছে।
সুমনার কোন উপশম নেই। অস্বাভাবিক আচরণ বেড়েই চলেছে।
কবিরাজ কে আজ আবার খবর দেওয়া হলে সে সকালে দলবল নিয়ে ফের সুমনাদের বাড়ি এসেছে।
কবিরাজ বাড়ি চারিদিকে আগুনের ধুয়ো দিয়েছে। চার কোনায় চারটি তাবিজ দিয়ে ‘বাড়ি বন্ধ’ করেছে। কারণ এ বাড়িতে নাকি ভুত স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
এ বাড়িতে অতীতে আরো দুজনকে ভুতে ধরেছিলো, এটা কবিরাজ ও তার দলবল জ্বিনের মাধ্যমে খবর পেয়েছে।
কবিরাজ এর অভিযোগ সত্যি! এর আগেও একবার সুমনার ফুফু এবং দাদার এমন হয়েছিলো ছিলো। তারা অনেক দিন ভুগেছিলেন।
কবিরাজের এমন কথায় তার প্রতি সবার বিশ্বাস আরো পোক্ত হয়।
কিন্তু এ বিশ্বাসে ছাই দিলেন সুমনাদের পাশের গ্রামে একজন শিক্ষিত ভদ্রমহিলা। তিনি আজ বিকেলে এসব ঘটনা শুনেন এবং তাদের বাড়ি আসেন।
পুরো কাহিনী শুনে তিনি বললেন ভুত পেত্নী এসব সত্য নয়। এটা মুলতঃ সুমনার মানসিক সমস্যা এবং সম্ভবত বংশগত। কারণ তার ফুফুর এবং তার দাদার এমন হয়েছিলো।
ভুতের আছর বা বাড়ীতে ভুতের ‘স্থায়ী আসন’ এগুলো পুরোটাই কুসংস্কার, কপট ভন্ডামী উক্তি।
ভদ্রমহিলা জানালেন তার মেয়েরও এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিলো একবার দেখা। তারাও না বুঝে কবিরাজ, সাধু সন্যাসী দেখিয়েছেন। প্রতারিত হয়েছেন।
পরে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছিলেন। তার মেয়ের এক্যুট সাইকোসিস নামে ব্রেইনের একটা হয়েছিলো। অল্প কদিনের চিকিৎসায় তার মেয়ে সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যায়। তার মেয়ে অত্যন্ত মেধাবী, সে এখন ভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ার এ পড়ছে।
ভদ্র মহিলা সুমনার গলা ও মাথা থেকে কবিরাজের দেয়া বিভিন্ন গাছের জড়, তাবিজ ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজেই সুমনাকে সাইকিয়াট্রিস্ট এর চেম্বারে নিয়ে এলেন।