সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় মদদে দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার অভিযোগ এনে গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর এই চিঠির একটি কপি জাতিসংঘ সদর দফতরে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি, নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনমূলক ও সহিংস কারচুপির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই ডামি নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে নাশকতা চলছে, তাতে শুধু গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া, প্রান্তিক মানুষ। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-কাঠামোতে, বিশেষত বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে, জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা-স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশ। চলমান অগ্নিসংযোগের প্রতিটি ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার একমাত্র বেনেফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র। শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো তদন্ত, তথ্য বা সূত্র ছাড়াই, প্রতিটি ঘটনার পরপরই অবলীলায় ও একই সুরে, অগ্নিসন্ত্রাসের দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। নিজেদের সুপরিকল্পিত এই ধ্বংসযজ্ঞকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নকে উষ্কে দিচ্ছেন, যা সরকারের প্রতিহিংসামূলক বক্তব্যে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় (তেজগাঁও) চলন্ত ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে হত্যা, এ ঘটনার আগে সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা খালি রাখতে ডিএমপির চিঠি, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থনে আওয়ামী লীগের যে চিরন্তন ‘ব্লেইম’ গেম পলিটিক্স হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি। বিএনপির মহাসমাবেশকে বানচাল ও চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে- ২৮ অক্টোবর একটি ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশের চিহ্নিত অংশ। মুখোশধারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সহায়তায়, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় এবং পুলিশ হাসপাতালের সামনে বাস ও গাড়িতে আগুন দেয়। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে বিএনপির কর্মীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। অগ্নিসন্ত্রাসের সময় নীরব দর্শক হিসেবে পুলিশের মৌন সহযোগিতা প্রদান, নাশকতা শেষে অপরাধীদের অবলীলায় ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়তে দেওয়া এবং পরবর্তীতে এর দায়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রায় ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে গণগ্রেফতার ও ২৭ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যাসহ গত দুই মাসের সব নাশকতা ও অঘটনই সংঘটিত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরা তালিকা করে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক করছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গণহারে গ্রেফতার করছে, অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গণহারে সাজানো রায় দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নানা প্রমাণাদিসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের মিথ্যাচারের ঘটনা বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়।