নতুন বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। আসন্ন এ নির্বাচনে বিজয়রথে থাকা নওয়াজ দলে প্রার্থী হিসাবে এবার অগ্রাধিকার পেয়েছেন নারীরা। আর এই নিয়েই যত বিপত্তি। নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঝেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেশটির রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত পাকিস্তান সুপ্রিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ক্ষোভটা অবশ্য নারী প্রার্থীতে নয়। বেছে বেছে অভিজাত পরিবারের নারীদের মনোনয়ন দেওয়ায়ই তাদের আপত্তি।
সংরক্ষিত আসনে প্রভাবশালী পরিবার অথবা সমাজের উচ্চস্তরের নারীদের মনোনীত করেছেন তিনি। দলের টিকিট তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। এমন সিদ্ধান্ত দলের অন্য নারী কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মানদণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। অসন্তোস প্রকাশ করেছেন দলের প্রবীণ নেতারাও। এমনিতেই দেশটির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারীদের পক্ষে ‘সাইডলাইন’ হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই নাখোশ ছিলেন কর্মীরা। সে আগুনে এবার ঘি ঢাললেন নওয়াজ শরিফ নিজেই।
চলমান এ মন কষাকষির মধ্যেই মঙ্গলবার জাতীয় পরিষদ-১৩০ লাহোর আসন থেকে নওয়াজের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। ডন, জিইও।
পিএমএল-এন জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত আসনের জন্য সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের স্ত্রী মুসারাত আসিফ ও তার ভাগ্নি শাজা খাজা এবং পিএমএল-এন সিনেটর চৌধুরী জাফর ইকবালের মেয়ে জেব জাফরকে বেছে নিয়েছে। ইকবালের স্ত্রী ইশরাত আশরাফকেও একটি সংরক্ষিত পাঞ্জাব বিধানসভা আসনের জন্য বাছাই করা হয়েছে। একইভাবে পিএমএল-এন তথ্য সচিব এবং সাবেক ফেডারেল মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব জাতীয় ও পাঞ্জাব উভয় বিধানসভার সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনীত হয়েছেন। যেখানে তার মা তাহিরা আওরঙ্গজেব জাতীয় পরিষদের আসনগুলোতে শীর্ষে রয়েছেন। দলটি নুজহাত সাদিককেও মনোনীত করেছে। যাকে ২০০৯ সালে সংসদের উচ্চকক্ষে সবচেয়ে ধনী নারী ঘোষণা করা হয়েছিল।
পিটিআইয়ের সাবেক আইনপ্রণেতা ওয়াজিহা কামারকেও মনোনীত করেছে। আরেকজন পিটিআই দল ত্যাগকারী উজমা কারদারকে একটি সংরক্ষিত প্রাদেশিক পরিষদের আসনে স্থান দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত আসন বণ্টনে সাধারণ নারী কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। যারা অক্লান্তভাবে ফ্রন্টলাইনে পার্টির সেবা করেছেন। একজন পিএমএল-এন নারী নেত্রী ডনের সঙ্গে কথা বলার সময় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন পাওয়া বেশিরভাগই ‘প্রভাবশালী নারী’।
ইসিপির তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্য ২৮ হাজার ৬২৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র পেয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ১৩৯ জন নারী। গত দুবারের থেকে নারীদের এ সংখ্যাটি অনেক বেশি। ইসিপি এবং ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন নেটওয়ার্ক (ফাফেন) অনুসারে, ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ১ হাজার ৬৮৭ জন নারী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। একইভাবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে মোট ১ হাজার ১৭১ জন নারী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পাঞ্জাব সর্বোচ্চ সংখ্যক মনোনয়নপত্র রেকর্ড করেছে। মোট ১৩ হাজার ৮২৩টি। ইসিপির তথ্যানুসারে, মরিয়ম নওয়াজ শরিফসহ ৪৭১ জন নারী জাতীয় পরিষদের সাধারণ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রাদেশিক পরিষদে ৮০২ জন নারী প্রার্থী বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা থেকে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নারীদের সংরক্ষিত আসনের জন্য যথাক্রমে ৪৫৯ ও ১ হাজার ৩৬৫টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। অমুসলিমদের জন্য প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত আসনের জন্য ৩২ জন নারী এবং অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত জাতীয় পরিষদে আসনের জন্য ১০ জন প্রার্থী কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ করবে ইসিপি। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ করবে ইসিপি।