অধ্যাপক পান্না কায়সারের চিরবিদায়

ছবি সংগৃহীত

 ডেস্ক নিউজঃ শহিদ শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী, সাংস্কৃতিক সংগঠক, লেখক-গবেষক, সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার আর নেই।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বেলা ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পান্না কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ব্যক্তিজীবনে পান্না কায়সার বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় সংসদেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

শিশু কিশোরদের সংগঠন খেলাঘরের সঙ্গে আজীবন সক্রিয় ছিলেন পান্না কায়সার। ১৯৭৩ সাল থেকে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর ১৯৯০ সালে এ সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন।

তিনি ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।

১৯৫০ সালের ২৫ মে পান্না কায়সারের জন্ম। তার পারিবারিক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। কলেজে পড়ার সময় ঢাকায় এক উচ্চবিত্ত পরিবারে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির অমানবিক পরিবেশ তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।

সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে ফের পড়ালেখায় মন দেন পান্না। এইচএসসি পাস করে কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন বাংলায় মাস্টার্স করতে।

সে সময়ই পরিচয় হয় তরুণ বুদ্ধিজীবী, লেখক শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল এক দিনে কারফিউয়ের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়।

কিন্তু সংসার জীবন দীর্ঘ হয়নি পান্না কায়সারের। বিয়ের মাত্র আড়াই বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে স্বামীকে হারান পান্না কায়সার। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কিছু সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তার আর ফেরা হয়নি।

এরপর থেকে পান্না কায়সার একাই মানুষ করেছেন তার দুই সন্তান শমী কায়সার এবং অমিতাভ কায়সারকে অধ্যাপক পান্না কায়সার শিক্ষকতা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে। তিনি লেখালেখি করে গেছেন দীর্ঘদিন।

তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে; মুক্তি; নীলিমায় নীল; হৃদয়ে বাংলাদেশ; মানুষ; অন্য কোনখানে; তুমি কি কেবলি ছবি; রাসেলের যুদ্ধযাত্রা; দাঁড়িয়ে আছ গানের ওপারে; আমি; না পান্না না চুনি; অন্য রকম ভালোবাসা ও সুখ।

পান্না কায়সার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় তার ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেব ২০২১ সালে মর্যাদাপূর্ণ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।