জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবারো নতুন করে  দু’পক্ষের সংঘর্ষ

সানজিদ মাহমুদ সুজন, শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবারো নতুন করে  দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৫ শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাজিরা থানা পুলিশ ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সোমবার (২৩-জানুয়ারী) সকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বোমার আঘাতে ও টেটা বিদ্ধ হয়ে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও ফারুক মাদবর ও সালাউদ্দিন মাস্টার গ্রুপ বনাম তাহের সরদার ও জলিল মাদবর ও সালেক মাদবর গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ রয়েছে। সবশেষ বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পর থেকেই ফারুক মাদবর ও কুদ্দুস বেপারী গ্রুপের আতঙ্কে এলাকাছাড়া রয়েছে তাহের সরদার, সালেক মাদবর ও জলিল মাদবর গ্রুপের লোকজন। কিছুদিন যাবত তারা পূণরায় নিজেদের বাড়িতে আসার চেষ্টা করে আসছিলো।
এরই সূত্র ধরে মাঝে-মধ্যেই ছোট-খাটো মারামারি হয় বিলাসপুরের বিভিন্ন এলাকায়। সবশেষ সোমবার বিলাসপুর ও জাজিরা ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত দূর্বাডাঙ্গা বাজার ও তার আশপাশের কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৭ জন আহত হলে তাদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। ৩জন ভর্তি রাখা হয়, এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।আর দূজন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি চলে যান।
এ বিষয়ে এক পক্ষের নেতৃত্বে থাকা সালেক মাদবর ও জলিল মাদবর জানান, বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই কুদ্দুস বেপারী ও ফারুক মাদবরের লোকজন আমাদের ভোটার-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে মারধর করে এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে। সবশেষ আমরা প্রশাসনের আশ্রয় নিলে তারা আমাদের সমর্থকদের বাড়িতে চলে আসার জন্য বলেন। তারা বাড়িতে আসলেই কুদ্দুস বেপারী ও ফারুক মাদবরের লোকজন তাদের উপর এই অতর্কিত হামলা চালালে সংর্ষের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে ফারুক মাদবরের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি এবং চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারীর ব্যাক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে বহুবার কল করলেও তিনি কল ধরেননি। তবে কুদ্দুস বেপারীর ছোট ভাই সৃদম বেপারি জানান, চরের লোক মারামারি করেছে, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। সকাল বেলা বিলাসপুরের চরাঞ্চলে দুটি পক্ষ মারামারি করেছে বলে শুনেছি।
এছাড়া জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ রহমান হাওলাদার বলেন, বিলাসপুর ইউনিয়নের লোকজন আমার জাজিরা ইউনিয়নের মধ্যে ঢুকে মারামারি করেছে। বিষয়টা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। প্রশাসনের কাছে দাবি করে তিনি বলেন, বিলাসপুর ইউনিয়নের লোকজন আমার ইউনিয়নে এসে কেনো এই মারামারিটি বাঁধালো আমি তার বিচার চাই।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জাজিরা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন জাজিরা থানার সেকেন্ড অফিসার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন। এছাড়া সন্দেহ ভাজন হিসেবে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করেছে বলে জানানো হয় জাজিরা থানা থেকে। পাশাপাশি কোন পক্ষ যদি মামলা নাও করে তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করবে বলেও জানানো হয়।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা রাত থেকেই বিলাসপুরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছি এবং সন্দেহভাজনদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। সকালে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই ১৯ রাউন্ড গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়, যার ফলে বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারেনি। আপাতত সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।