সানজিদ মাহমুদ সুজন,শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রোমান বাদশা বলেন” নিয়মিত ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, শরীরে কিছু চলাফেরার অস্তিত্ব টের পাওয়া, অস্বস্তিকর মানসিক অবস্থা, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন-অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ ফুসফুসে টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে।”
ইয়াবা হলো মেথাফেটামাইন (মিথাইল এ্যামফিটামিন) ও ক্যাফেইনের মিশ্রণ। মাদকটি একাধারে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র আক্রমণ করে। এর মূল শব্দ থাই থেকে উৎপত্তি। সংক্ষিপ্ত অর্থ পাগলা ওষুধ। অনেকে একে বলে ‘ক্রেজি মেডিসিন’। মূল উপাদান মিথাইল এ্যামফিটামিন এ্যামফিটামিন। আসলে ইয়াবা নেশা জাতীয় ওষুধ। এক ভয়াবহ মাদক যা মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র এবং শরীরের যে কোন অঙ্গকেই আক্রান্ত করতে পারে। ধীরে ধীরে অকেজো করে দেয় একটি সুন্দর দেহ, মন ও মানসিকতার। ইয়াবা আসক্তির কারণে মস্তিষ্কের বিকৃতি হতে পারে। মাঝে মাঝে ইয়াবার সঙ্গে ক্যাফেইন বা হেরোইন মেশানো হয়, যা আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বাড়ে। পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্ত ব্যক্তিরা বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। দৃষ্টি বিভ্রম, শ্রুতি বিভ্রম আর অস্বাভাবিক সন্দেহ প্রভৃতি উপসর্গ থেকে এক সময় জটিল মানসিক ব্যাধিও দেখা দেয়।
আজকাল আমাদের আশেপাশের স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে যে সকল বাবা মায়েরা চাকুরীজীবি কিমবা বাবা বিদেশে থাকেন,এমন পরিবার। পারিবারিক ভাবে চাপে থাকা ছেলে মেয়েরা। কর্মহীন যুবকরা পারিপার্শ্বিকতা থেকে ড্রাগ সেবনে লিপ্ত হয়ে পরছে।ফলে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি,ধর্ষনের মতো ঘটনা ঘটছে।এমনকি শাষন করতে গেলে ছেলে মেয়েরা বাবা মাকেও হত্যা করছে।
পরামর্শ দিয়েছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক,
সাইক্রিয়েট্রিস্ট ও ড্রাগ রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আহসানুল হাবিব বলেন”
ইয়াবা আসক্তদের চিকিৎসা কয়েক ধাপে করা হয়। প্রথম ধাপ হলো ডিটক্সিফিকেশন প্রসেস। এর জন্য মাদক নিরাময়কেন্দ্রে রোগীকে ভর্তি করাতে হয়। সেখানে ইয়াবা গ্রহণ থেকে ব্যক্তিটিকে বিরত রেখে শরীর নেশামুক্ত করা হয়। তখন তার উইথড্রল ইফেক্ট হয়। অর্থাৎ ইয়াবা না-পাওয়ার ফলে তার শারীরিক ও মানসিক কিছু অসুবিধা তৈরি হয়। অবশ্য এ ইফেক্টগুলো ৭২ বা ৯৬ ঘণ্টা পর আর থাকে না। সমস্যাগুলো কতটুকু জটিল হবে, তা নির্ভর করে আগে ইয়াবা গ্রহণের মাত্রা ও পদ্ধতির ওপর। ঘুমের ও আরো কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
এক থেকে দুই সপ্তাহ পর শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া দূর হয়। কিন্তু ছয় থেকে আট সপ্তাহ কোনো নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি থাকা ভালো। নচেৎ আবারও সেবনের ইচ্ছা জাগে।
ইয়াবা আসক্তির সঙ্গে শারীরিক বা মানসিক অন্য সমস্যা থাকলে—একই সঙ্গে তারও চিকিৎসা করাতে হয়।
দুই থেকে তিন মাস সময় কোনো নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে ইয়াবার কারণে হওয়া অন্য রোগগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে চিকিৎসাকালীন বা পরবর্তী সময় আবার আসক্ত হওয়া যাবে না।
চিকিৎসার পাশাপাশি ভর্তির সময় গ্রুপ সাইকোথেরাপি ও ফ্যামিলি থেরাপিও দেওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পরও ১৫ দিন পরে এসে কমপক্ষে ছয় মাস এই থেরাপিগুলো নিলে ভালো। এতে তার আসক্তি কমে যায়।
ইউরিন পরীক্ষা করে জানা সম্ভব, সে আবার এটি নিচ্ছে কি না।
আইনশৃংখলা বাহিনির একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন” আমাদের রাজনৈতীক নেতা, প্রশাসনিক অফিস্যার ও আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদষ্যদের মাদক প্রতিরোধের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহন করলে ও সীমান্ত ও অভয়ন্তরীন টহল বারানো উচিত। ” সমাজ ড্রাগমুক্ত না হলে ভবিষ্যত ডিজিটাল বাংলা সত্যিই অন্ধকার।এ ব্যাপারে সকলের অবস্থানথেকে কঠোর হওয়া জরুরী।