মো. সাইফুল ইসলাম, ধামরাই( ঢাকা):
ঢাকার ধামরাইয়ে তিনফসলি জমির উপড়িভাগের মাটি যাচ্ছে তিনশতাধিক ইটভাটায়। এসব ইটভাটার ই তৈরির জন্য নিয়মিত আবাদি জমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে জনজীবনসহ তিন ফসলি জমি।
এ দৃশ্য চোখে পড়ে ধামরাই উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ও নান্নার ইউনিয়নের ধাইরা গোপালকৃষ্ণপুর এলাকায়সহ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষি মাঠে। নিজেদের ইচ্ছেমত মাটি কেটে নিচ্ছে মাটি ব্যবসায়ী ও ইউভাটার মালিকরা। যেমন নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তা, তেমনি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জনজীবন। তবে এসব বিষয় যেন দেখার কেউ নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে ভুক্তভোগি মানুষের অভিযোগ।
সরেজমিনে উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মোয়াজ্জেম হোসেন মেম্বার,মো. কিতাব উদ্দিন,নাছির হোসেন, নান্নার ইউনিয়নের ধাইরা গোপালকৃষ্ণপুর এলাকায় মো. মতিয়ার রহমান চেয়ারম্যান,নুরুল হক মেম্বার ,মো. লিটন মিয়া,মো. রোমান মিয়াধামরাইয়ের সীমান্তবর্তী আটীগ্রাম ইউনিয়নের মালুটিয়া গ্রামে মো. সোহেলরানা লিটন কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে এবং পেশীশক্তির বলে ভেকু মেশিন দিয়ে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে সরিষা ও গমসহ মৌশুমী ফসলের জমির মাটি প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ইটভাটায়।
এছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে পুকুরে পরিণত হচ্ছে একসময়ের তিনফসলি জমি। একটি জমি এভাবে গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের জমিও ভেঙে পড়ছে। ফলে ওই জমির মাটিও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন জমিরি মালিক। এতে বিশাল এলাকা ফসলশুন্য হয়ে পড়ায় ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তার আশংকা করা হচ্ছে।
অভিযোগ করে উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক আ. মান্নান বলেন, আমাকে না জানিয়ে মাটি ব্যবসায়ী নাছির হোসেন আমার সরিষা ক্ষেতের উপর দিয়ে মাটির ট্রাক চলাচলের লিংকরোড বানিয়েছে। এতে আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি বাঁধা দিলে নাছির আমাকে মারধর করতে আসে।
কৃষক আওলাদ হোসেন বলেন, আমি ৮৭ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে সরিষা চাষ করেছি। মোয়াজ্জেম মেম্বার আমার সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে মাটির ট্রাক নিচ্ছে। আমাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত আমাকে আর কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। টাকা চাইলে শুধুই টালবাহানা করে সময় পার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কান্দাপটল গ্রামের জমির এক মালিক বলেন, আমার ১০০শতাংশ ফসলি জমির উপড় দিয়ে মাটির ট্রাক যাওয়ার রাস্তা তৈরি করেছে মাটির ব্যবসায়ী নাছির। আমি বাঁধা দিলেও আমার বাঁদা উপেক্ষা করে জমিতে কলা ও কাঁঠাল গাছ নষ্ট করে ট্রাক চালাচ্ছে। এতে আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে। নাছির প্রভাবশালী হওয়ায় কিছু বলতে পারি না।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়,বাইশাকান্দা, , মাদারপুর, কালামপুর, জালসা, ধলকুন্ড, ভালুম, গাড়াইল, দেপাশাই, নান্নার, জয়পুরা, বেলিশ্বর, সুয়াপুর ও মালুটিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা না বুঝেই তা মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে মাটি ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন মেম্বার বলেন, জমির মাটি আমি ক্রয় করে কটেছি। কারও মাটি জোর করে কাটছিনা। ফসল না হলে মাছ চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হবে।
মাটি ব্যবসায়ী নাছির আরও বলেন,রাস্তাঘাট,ব্রিজ, কালভার্ট ও পাকাভবন বানাতে ইট লাগে। তাই আমি মাটির ব্যবসা করছি। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে তখন আর মাটির ব্যবসা করবো না।
ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফ হাসান বলেন, ইটভাটায় মাটি কেটে নেওয়ার ফলে ফসলি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ঝুঁকি এড়াতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এখনই একযোগে আসতে হবে। নইলে পরিণাম হবে ভয়াবহ।
এবিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বলেন, রাতের আঁধারে জমির মালিকদের সাথে আঁতাত করে মাটি বিক্রি করছে মাটি ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।