নেত্রকোনায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু

নেত্রকোনা প্রতিনিধি ।

নেত্রকোনা পৃথক স্থানে পানিতে ডুবে ৪ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার জেলার পূর্বধলা ও দুর্গাপুর উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটে।

তাসকিন (৭) জেলা সদর উপজেলার সাতপাই (উল্লাবাড়ি) এলাকার মো. আল মামুনের ছেলে; নোমান পূর্বধলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পাঁচমারকেন্ডা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও সালমা একই উপজেলা আগিয়া ইউনিয়নের টিকুরিয়া গ্রামের নওয়াব আলীর মেয়ে ও বিশকাকুনী ইউনিয়নের মফিজুল ইসলামের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকাল আড়াইটার দিকে তাসকিন মা-বাবার সঙ্গে পাঁচমারগেন্ডা গ্রামে নানা আমছর আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাসকিন তার নানার বাড়িতে থাকা খালাতো ভাই নোমানকে সঙ্গে নিয়ে সাড়ে ৩টার দিকে ঘুরতে বের হয়ে সাড়ে ৪টায় বাড়িতে ফিরে না আসায় আত্মীয়স্বজনসহ অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে। পরে রোববার সকালে তাদের নানি পারভিন আক্তার বাড়ির ৩০০ গজ উত্তর পাশে কংস নদের শাখা দেইড়া গাং নদীতে ভাসমান দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।

নোমানের বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে সে নানার বাড়িতে বসবাস করত।

অপরদিকে একই দিন সকালে উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের টিকুরিয়া গ্রামের নবাব আলীর মেয়ে ও বিশকাকুনী ইউনিয়নের বিশকাকুনী গ্রামের মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সালমা আক্তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রোববার সকালে হাতমুখ ধোয়ার সময় বাড়ির সামনের পুকুরে পড়ে যায় সালমা। ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ায় সালমার মা জোৎস্না বেগমসহ বাড়ির লোকজন পুকুরে খোঁজাখুঁজি করে উদ্ধার করে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম প্রতিটি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে দাদির সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সমবয়সি শিশুদের সঙ্গে নদীতে গোসল করার সময় পানিতে ডুবে জাহাঙ্গীর মিয়া (৫) মারা যায়। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুর্গাপুর পৌর শহরের তেরী বাজার এলাকার সোমেশ্বরী নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত শিশু জাহাঙ্গীর ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার কুল্লাতলী গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে। জহিরুল পেশায় রিকশাচালক।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের তেরী বাজার এলাকায় ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন উম্মে হানি (দাদি)। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন নাতি শিশু জাহাঙ্গীরকে। শনিবার বাড়ি ফিরে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রোববার সকালে শিশু জাহাঙ্গীর সেমাই খেয়ে আরও দুই শিশুর সঙ্গে বাড়ির সামনেই সোমেশ্বরী নদীতে গোসল করতে যায়। গোসল করার সময় জাহাঙ্গীর পানিতে তলিয়ে যায়। অন্য দুই শিশু বাড়ি ফিরে জাহাঙ্গীর নদীতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে জানালে পরিবারের লোকজন নদীতে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে একপর‌্যায়ে শিশু জাহাঙ্গীরের নিথর দেহ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া রোববার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের শশারপাড় এলাকার ইমরান মিয়ার মেয়ে আফিয়া খাতুন (২) পরিবারের সকলের অগোচরে বাড়ির পাশের একটি পুকুরের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে পুকুর থেকে আফিয়ার মরদেহটি উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু আফিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ওসি উত্তম চন্দ্র দেব জানান, দুটি মৃত্যুই হৃদয়বিদারক। শিশু জাহাঙ্গীরের মরদেহ থানা হেফাজতে রয়েছে। তার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আফিয়ার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।