মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ইউএসএ প্রতিনিধি:
ওয়াশিংটন ডিসির গেলড ন্যাশনাল রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা ফোবানা কনভেনশন। থ্যাংকস গিভিংয়ের ছুটিতে গত ২৬-২৮ নভেম্বর ফোবানা কনভেনশন অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে দুপুর দুইটায় সকল ধর্মের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃধর্মীয় কনফারেন্স।
কনফারেন্সের বিভিন্ন অংশজুড়ে ছিল- ইন্টারফেইথ প্রেয়ার, পিস ডায়লগ, প্যানেল ডিসকাশন, মেডিটেশন, এওয়ার্ড সিরিমনি এবং হারমনি সেলিব্রেশন। এরপর আন্তধর্মীয় প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে কনফারেন্সটি শেষ হয়।
ইন্টারফেইথ সেন্টার অব ইউএসএ-এর উদ্যোগে পরিচালিত হয় এই আন্তঃধর্মীয় কনফারেন্সে। এতে বিভিন্ন ধর্মের স্কলার, ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ইন্টারফেইথ সেন্টার অব ইউএসএ-এর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী সুখেন গমেজ কনফারেন্সটি পরিচালনা করেন।
ঐতিহাসিক ন্যাশনাল মসজিদ অব ওয়াশিংটনের ইমাম কাদির আব্দুস সালামের আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনার মাধ্যমে কনফারেন্স শুরু হয়। জাতিসংঘের এনজিও বিষয়ক প্রতিনিধি ডক্টর রেমী আলাপো, গ্রেটার গ্রেস মিনিস্ট্রির বিশপ ডক্টর এডুয়ার্ট বারনেট, ইন্টারন্যাশনাল বুডিস্ট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট কাতোগোসতোতা উপারানাতারা মাহাথেরা নিজ নিজ ধর্মের পক্ষে সার্বজনীন প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন।
ডক্টর রেমী আলাপো তার বক্তৃতায় বলেন, পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্মই শান্তির কথা বলে। যারা ধর্মের অনুসারী তাদের মধ্যে অনেক নেতিবাচক বিষয় থাকতে পারে কিন্তু ধর্মের মধ্যে তেমন কিছু নেই। ধর্ম শুধু শান্তির বার্তা দেয়। তাই ধর্মকে আশ্রয় করে অপরাধ করা জঘন্য ব্যাপার।
ডক্টর এডুয়ার্ট বারনেট বলেন, পৃথিবীর সবগুলো ধর্মের মধ্যে একটা মিল আছে। একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই প্রতীয়মাণ হবে যে, তারা একই শান্তির কথা বলছে, মানবতার কথা বলছে। অথচ আমরা সেগুলোকে গ্রহণ না করে যে অল্প কিছু অমিল আছে, শুধু সেগুলো নিয়েই কথা বলি।
কাতোগোসতোতা উপারানাতারা মাহাথেরা বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, এটাকে মোকাবেলা করতে হবে ধর্মের শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে। অন্য ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপারে সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হবে। অন্য কেউ নয়, তারা আসলে আমাদেরই ভাই।
ইন্টারফেইথ সেন্টার অব ইউএসএ-এর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সংগঠনের পরিচিতি এবং কার্যক্রম তুলে ধরেন। ওয়ার্ল্ড ইয়োগা কমিউনিটির চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের বিশেষ পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত গুরু দীলিপজি মহারাজ মেডিটেশন পরিচালনা করেন।
ফোবানা সম্মেলনের আহ্বায়ক জিআই রাসেল এ সময় উপস্থিত থেকে নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানান। বিশ্ব শান্তি ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বিদিতা রহমান ভূঁইয়া।
ইউনিভার্সেল পিস ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি তমিকো দুগান, মেট্রোপলিটন ওয়াশিংটন ডিসির বেদিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তপন দত্ত, বিডি খ্রীষ্টান নিউজের সম্পাদক বিপুল এলিট গলছাভেস, জেরিমি বিশপ জুনিয়র, রাজ সুসান বুসান বিশ্ব শান্তি কামনায় বক্তব্য প্রদান করেন। সবশেষে, ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
তমিকো দুগান বলেন, শান্তি ব্যাপারটা চর্চার বিষয়। এটা আত্মস্থ করার মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়। চাইলেই কোথাও থেকে শান্তি উড়ে আসে না। তাই চর্চা আর উপলব্ধির মধ্য দিয়ে আমাদের সহনশীলতা অর্জন করতে হবে। তাহলেই অপর ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে।
বিপুল এলিট গলছাভেস বলেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে ধর্মের কাছেই আশ্রয় নিতে হবে। ধর্মহীন পৃথিবী শুধু অস্থিরতা, হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ বাড়াবে, আর কিছু নয়। অন্য ধর্মের সঙ্গে অমিল নয়, মিলনের অংশটুকু খুঁজতে হবে।
প্রসঙ্গত, আন্তঃধর্মীয় সংলাপসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমাজে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মহান লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছে ইন্টারফেইথ সেন্টার অব ইউএসএ। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষকে একটি প্ল্যার্টফর্মে বসিয়ে জ্ঞান বিনিময় ও রিলিজিওয়াস হারমনি সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য।