মেট্রোরেল প্রকল্পের মালামাল চুরি করতে গিয়ে মারা যান নাজমুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মো. নাজমুল (১৮) নামে এক তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই তরুণের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে মালামাল চুরির তথ্য পেয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাব। তদন্তে র‍্যাব জানতে পেরেছে, তুরাগ এলাকা থেকে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ওই তরুণ। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই প্রকল্পগুলো চলাকালে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ সাধারণত খোলা জায়গায় স্তুপ করে রাখা হয়। একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্র সু-কৌশলে সেই মালামাল চুরি করতো।

তিনি বলেন, নিহত নাজমুলও সংঘবদ্ধ এ চোর চক্রের সদস্য। চক্রটির আরও দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪। গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন- মো. আশিক (১৯) ও মো. হারুন (৪০)।

এসময় তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত মালামালসহ একটি পিকআপ ও সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুলের মৃত্যু ও প্রকল্পের মালামাল চুরি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মূলত এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে নিহত নাজমুলের পরিবারের একটি সাধারণ ডায়েরি থেকে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর নাজমুল তার মিরপুরের বাসা থেকে কাজের সন্ধানে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর জানা যায়, ডিএমপির তুরাগ থানা এলাকায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে মৃতদেহটি নাজমুলের বলে তার বাবা শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই র‍্যাবের একটি দল ছায়াতদন্ত শুরু করেন।

গ্রেফতার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে জানায়, নিহত নাজমুল ও তারা দুজন (আশিক ও হারুন) রাসেল এবং শামীম নামের আরও দুজনের সঙ্গে মিলে এ চোরাকারবারি করতো। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও শামীম নাজমুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। ওই রাতে আশিকও তাদের সঙ্গে চুরির কাজে যোগ দেয়। যদিও সেদিন তাদের সঙ্গে ছিলেন না হারুন। তুরাগে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ঘটনাস্থলেই নাজমুলের মৃত্যু হয়। পরে তারা নাজমুলকে সেখানে রেখেই পালিয়ে যান।

র‍্যাব বলছে, চক্রটি বেশকিছু দিন ধরে মেট্রোরেলের মালামালসহ অন্যান্য সরকারি কাজের মালামাল এবং বৈদ্যুতিক তার চুরির কাজ করে আসছিলো। র‍্যাবের অভিযানে আশিক গ্রেফতার হলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তারা ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন এলাকায় পরস্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন সু-কৌশলে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে আশিক স্বীকার করেছে।

এ চক্রটি মূলত চুরির কাজটি কয়েক ধাপে সম্পন্ন করতো। প্রথমে তারা প্রকল্পের কী মালামাল কোথায় আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করতো। পরে সে অনুযায়ী চুরির পরিকল্পনা এবং চুরি করা মালামাল একটি গোপন জায়গায় নিয়ে রাখতো। আরেকটি গ্রুপ চোরাই মালামাল পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে সহজে বহনযোগ্য করে থাকে। পরবর্তীতে এধরনের মালামাল কেনেন, এমন চোরাই মাল ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো বিক্রি করা হতো।

র‍্যাব অধিনায়ক মোজাম্মেল হক আরও বলেন, এ চোরাই চক্রটিসহ এমন আরও কয়েকটি চোর চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে আইনানুগ কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন।

অদূর ভবিষ্যতেও এরূপ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে র‍্যাব-৪ এর জোরালো অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।