ডিম-পেঁয়াজের পর দাম বাড়ছে ভোজ্যতেলের

আমদানি শুল্ক হ্রাসের পরও রাজধানীর খুচরা বাজারে কমেনি পেঁয়াজের দাম। উলটো সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

পাশাপাশি আলুও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরেই। দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা হলেও ডিমের দাম কমেনি। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি (১২ পিস) ৬ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে ব্রয়লার মুরগির সঙ্গে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। রসুন কিনতেও কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে বাড়তি ১০ টাকা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা, যা সাতদিন আগে ১০৫-১১৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা, যা আগে ৯০-১০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০, যা এক সপ্তাহ আগেও ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮-১৬০, যা সাতদিন আগেও ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আলু ও পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক হ্রাস করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ পাড় হলেও দাম কমেনি। বরং বেড়েছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮০, যা গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা ছিল। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫, যা আগে ১৫০-১৬০ টাকা ছিল। এদিকে দেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে ৫০ লাখ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। প্রথম চালানে গত বছর আমদানি হয় ৬১ হাজার ৮৫০টি ডিম। এবার দ্বিতীয় চালানে আমদানি হয় ২ লাখ ৩১ হাজার ৪০টি। তারপরও দাম কমেনি, বরং হুহু করে বাড়ছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. ইমন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এক সরকার পতন ঘটিয়ে নতুন এক সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ভেবেছিলাম এ সরকারের আমলে কিছু কমুক আর না কমুক, নিত্যপণ্যের দাম কমবে; কিন্তু তা কমেনি। বরং বেড়েছে। পণ্যের দাম কমাতে কিছু পণ্যের শুল্ক হ্রাসও করা হয়েছে; কিন্তু বাজারে এর প্রভাব নেই। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে ডিমের কোনো সংকট নেই। তারপরও ডজন কিনতে ১৬৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। নতুন করে ভোজ্যতেলের দামও বাড়ছে। যে বা যারা তদারকি করবে, তাদেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ফেসবুক পেজে ভিডিওতে তাদের দেখা যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে বাজারে পণ্যের দাম কমবে না।

একই বাজারের মুদি দোকানি আমানত আলী বলেন, নতুন সরকার আসার পর কিছুদিন রাস্তায় ও বাজারে চাঁদাবাজি ছিল না। এজন্য কিছু পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমেছিল। এখন আবার চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। তাই পণ্যের দামে প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি এমন- এক দল গেছে, আরেক দল এসেছে। এখন কারা চাঁদা নিচ্ছে, তা সবাই জানে। ব্যবস্থা নিলে পণ্যের দাম আবারও কমে যাবে।

রাজধানীর খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ছোটদানার মসুর ডাল বিক্রি হয় ১৩৫ টাকা। প্রতি কেজি খোলা সাদা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। প্যাকেটজাত আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। পাশাপাশি প্যাকেটজাত ময়দা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। সঙ্গে দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা। আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৬০ টাকা।