চলমান সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের অর্থ আছে এমন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাড়ানোর পথে হাঁটছে সরকার। এর অংশ হিসাবে প্রকল্পের গতি বাড়াতে আজ বৈঠকে বসছে পর্যালোচনা কমিটি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩৬ সিনিয়র সচিব ও সচিব এতে অংশ নেবেন। বৈঠকে ২৭৯টি প্রকল্পের অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিতে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, সার্বিকভাবে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটি দেখা হবে। সমস্যা থাকলে সেগুলো দ্রুত সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। প্রকল্পের গতি বাড়িয়ে বৈদেশিক অর্থের ব্যয় বাড়ানোর জন্যই এমন উদ্যোগ।
সূত্র জানায়, ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় পরিকল্পনা কমিশনের সভা। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন যথাযথভাবে ব্যবহারের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অগ্রগতি খতিয়ে দেখবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে আরও যে দুটি বিষয় আলোচনা হবে সেগুলো হলো-গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলেন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) নীতিমালার আলোকে প্রকল্প নির্ধারণ এবং প্রজেক্ট প্লানিং সিস্টেম (পিপিএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলো আলটিমেটলি বাস্তবায়ন করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এ ক্ষেত্রে একেক মন্ত্রণালয়ের একেক রকম সমস্যা। কোনোটা প্রকল্প বাস্তবায়নে ভালো করছে, আবার কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে ধীরগতি। সেখানে এরকম পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক ফলদায়ক হবে কিনা সেটি নির্ভর করবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন ঘটছে কিনা তার ওপর। এই উদ্যোগের ফলাফল নিয়ে আশা বা নিরাশা কোনোটিই এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।
আইএমইডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় করেছে ২৮ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা বা ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তুলনা করলে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত এ অর্থবছরে কম ব্যয় হয়েছে ৭৭১ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এডিপি বরাদ্দ দেওয়া আছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী ১২ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে উত্থাপন হতে যাওয়া সংশোধিত এডিপিতে বড় অঙ্কের অর্থ কাটছাঁট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বসছে এই পর্যালোচনা বৈঠক।
কোন মন্ত্রণালয়ের কত বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প : আইএমইডি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের রয়েছে ৫৩টি বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্প। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের ২৬টি, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের ২৬টি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১৭টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২টি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প।
আরও আছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২৫টি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩টি, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ৮টি, সেতু বিভাগের ২টি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৯টি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৩টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১টি, কৃষির ১১টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৩টি এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প। এছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১০টি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ৪টি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৪টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ৫টি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণের ৬টি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫টি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৩টি, জনপ্রশাসনের ১টি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬টি, অর্থ বিভাগের ৩টি, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১০টি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ১টি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৩টি, বাণিজ্যের ৩টি, যুব ও ক্রীড়ার ১টি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ৩টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২টি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১টি, আইএমইডির ২টি, পরিকল্পনা বিভাগের ২টি, ইআরডির ৩টি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২টি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ১টি প্রকল্প।