দেশের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে যাচ্ছে দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস। জেলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে সিএনজি করে (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) রাজধানী ও আশপাশের জেলা শহরে সরবরাহ করা হবে। সিলিন্ডারে করে এই গ্যাস তিতাস গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গ্যাস পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম।
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ সিএনজির ওজন বাতাসের থেকেও হালকা। চাপের মাধ্যমে এই গ্যাস তরলে পরিণত করে ট্যাঙ্কে জমা করা যায়। ভোলা থেকে সিলিন্ডারে করে এনে গ্রাহকের প্রান্তে আবার আগের অবস্থায় (১৫ পিএসআই) করে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করা হবে। এ জন্য নির্ধারিত গ্রাহক প্রান্তে আরসি (রেগুলেটিং কন্ট্রোল ইউনিট) স্থাপন করা হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিকে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহন করবে ইন্ট্রাকো। আগে থেকে করা চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিটি গ্রাহকদের গ্যাস পৌঁছে দেবে।
ভোলার গ্যাসের প্রথমে সরবরাহ পাচ্ছে গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। বৃহস্পতিবার
(আজ) থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকবে।
চলতি বছরের ২১ মে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি চুক্তি সই করে। চুক্তির আওতায় ভোলা থেকে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা দরে কিনে ৪৭.৬০ টাকা দরে বিক্রি করবে ইন্ট্রাকো লিমিটেড।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ী বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, সমকালীন সমস্যাকে মিটিয়ে এগিয়ে যাওয়া সরকারের বড় লক্ষ্য। যেসব এলাকায় গ্যাসের সমস্যা বেশি সেখানে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে শুধু সরবরাহ বাড়বে না, সংকটও দূর হবে।
একই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার জানিয়েছিলেন, ভোলা এলাকায় ২ দশমিক ০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন কমবেশি ২২শ থেকে ২৭শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে পেট্রোবাংলা। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে কমপক্ষে ৪ হাজার ঘনফুট। প্রতিদিন আমদানি করা যায় এক হাজার ঘনফুট গ্যাস। তারপরও ১ হাজার ঘনফুটের মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঢাকার আশপাশ ও টাঙ্গাইল এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বল্পচাপ সমস্যায় ভুগছে। যেখানে স্বল্পচাপ বিরাজ করছে, সেখানে দেওয়া হবে এই গ্যাস।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ জানান, ভোলা গ্যাস ফিল্ডে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে সব গ্রাহক মিলে চাহিদা রয়েছে ৯২ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্রাহক না থাকায় ২৭ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় দেশের অন্য অঞ্চলে নেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোতে প্রমাণিত মজুদ ধরা হয় ২০ দশমিক ৫৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট), সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে আরও প্রায় ৮ টিসিএফ মজুদ ধারণা করা হয়। এ যাবৎ প্রায় ১৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফের মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে, সে হিসাবে আর মাত্র ৮ বছরের গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে।