রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এতে বিপর্যয় সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে; যা কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হতে পারে। একই সঙ্গে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলার তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি।
শনিবার বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বেলটাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন ল্যাভরভ। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে ল্যাভরভের মন্তব্যকে।
তিনি বলেছেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানাই। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি। বেসামরিক নাগরিক, জিম্মি লোকজন রয়েছে জানার পরও নির্বিচার বলপ্রয়োগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন।
রাশিয়ার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল যেভাবে হামাসকে ধ্বংস করতে চায়, সেভাবে ধ্বংস করা অসম্ভব। সতর্ক করে দিয়ে ল্যাভরভ বলেন, ‘যদি গাজাকে ধ্বংস এবং এর ২০ লাখ বাসিন্দাকে বহিষ্কার করা হয়, যেভাবে ইসরায়েল এবং বিদেশি কিছু রাজনীতিবিদ প্রস্তাব দিয়েছেন, তা শতাব্দীকালের জন্য না হলেও বহু দশকের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’
‘অবরোধের মধ্যে থাকা জনগণকে বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং সেখানে মানবিক কর্মসূচি ঘোষণা করা দরকার।’
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারীগোষ্ঠী হামাসের ইসরায়েলে আকস্মিক হামলার পাল্টায় গাজাজুড়ে বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় ৭ হাজার ৭০৩ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে।
যুদ্ধ শুরুর পরপরই সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়ে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। আর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় মারা গেছেন অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন। ইসরায়েলের টানা হামলার কারণে গাজার প্রায় ১৪ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। চলমান যুদ্ধের মাঝে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করেছে। হামাস নেতাদের মস্কো সফরের ঘটনা নিয়ে রাশিয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসরায়েল। মস্কো সফরে যাওয়া হামাস নেতারা বলেছেন, তারা রাশিয়ার অনুরোধে গাজায় জিম্মি হয়ে পড়া ৮ রুশ নাগরিককে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এ জন্য জিম্মি রুশ নাগরিকদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছেন তারা।
তবে রাশিয়া ইসরায়েলের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে বলে জানিয়েছেন ল্যাভরভ। তিনি বলেছেন, আমরা ইসরায়েলের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ রাখছি এবং আমাদের রাষ্ট্রদূত নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। রুশ এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার প্রয়োজনীয়তার বার্তা পাঠাচ্ছি।