ডেস্ক নিউজঃ জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসেই প্রাণ গেল ৯৪২ জনের, আক্রান্ত ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪২৮ জন ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১৪, আক্রান্ত
এবার ডেঙ্গু দেশের মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে রাজধানী ছাপিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও ডেঙ্গুর কবলে পড়েছেন। এমনকি গ্রামেও এ বছর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যু কেড়ে নিচ্ছে শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ-নানা শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষের জীবন। বছরের শুরু থেকে মে-জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা একটু কম হলেও জুলাই থেকে শুরু হয় তাণ্ডব।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর হিসাব অনেকটা অসম্পূর্ণ। কিন্তু সেই হিসাবটাও এখন আতঙ্কের। দুশ্চিন্তার।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ৯ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে নজর দিলে দেখা যাবে, এ সময়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৪০৬ জন আক্রান্ত এবং ৯৮৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে জুলাই থেকে আগস্ট-এই তিন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪২৮ এবং মারা গেছেন ৯৪২ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই হিসাব গা শিউরে ওঠার মতো। কারণ, জানুয়ারি থেকে জুন-ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৭৮ জন। আর এই সময়ে মারা যান ৪৭ জন।
অথচ এর পরের তিন মাসে ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল আশঙ্কাজনক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধারা রোধ করা না গেলে অক্টোবরে পরিস্থিতি আরও করুণ হতে পারে। কারণ, মশা নিধনে গতি কম থাকায় এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত অসংখ্য রোগী হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে বারান্দা ও করিডরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক হাসপাতালে এখনো স্যালাইনের সংকট রয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, এত কিছু করার পরও ক্ষুদ্র এডিস নির্মূল সম্ভব হচ্ছে না কেন। মূলত, আমরা কো-অর্ডিনেশন করতে পারছি না। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে পারিনি। সঠিক পদ্ধতিতে লার্ভা নিধন করতে পারিনি। ডেঙ্গুতে এত মৃত্যুর দায় কার-প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিকে একক মাস হিসাবেও ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও ভর্তির পরিসংখ্যানে অন্য যে কোনো মাসকে ছাড়িয়ে গেছে এ বছরের সেপ্টেম্বর। গত এক দিনে আরও ১৪ জনের মৃত্যু এবং নতুন করে হাসপাতালে ২৪২৫ জন রোগী ভর্তিতে আগস্টের রেকর্ড ভেঙেছে চলতি মাসের শেষ দিনটিও। এ নিয়ে দেশে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৯৬ জনের। এর আগে আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং মারা যান ৩৪২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ৭৫১ এবং ১৬৭৪ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৯৫৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৩৭৯ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৫৮০ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ৯ মাসে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ২২২ এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ২০ হাজার ১৮৪ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে ঢাকায় মারা গেছেন ৬৩৯ এবং ঢাকার বাইরে ৩৫০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই ?শুরু হয়েছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিটি মাস ধারাবাহিকভাবে আগের চেয়ে ভয়ংকর রূপ পেয়েছে। এর আগে মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মেতে ১ হাজার ৩৬, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ এবং জুলাইয়ে ৪৩ হাজার ৮৭৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আক্রান্তের মতো বছরের মাঝামাঝি থেকে প্রাণহানিও বাড়তে থাকে।
মৃত্যুর হিসাবে দেখা যায়, জানুয়ারিতে ৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে শূন্য, এপ্রিলে ২, মেতে ২, জুনে ৩৪, জুলাইয়ে ২০৪ এবং আগস্টে ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়।