চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়ে, অসহায় বাবার আকুতি

নোমান খসরু
নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ যে বয়সে অন্য সবার মতো খেলাধুলা আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করার কথা, সেই বয়সে অধরা মজুমদার (১৬) চোখের মারাত্বক সমস্যায় ভুগছে। ডান চোখ বন্ধ নিয়েই জন্মেছে অধরা মজুমদার। ছয় বছর পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডান চোখের দৃষ্টি ফিরে পেলেও আবারও দেখা দিয়েছে সমস্যা। চিকিৎসা না হলে বাম চোখের দৃষ্টিও হারিয়ে যেতে পারে যেকোনো দিন। মেয়েকে সুস্থ করতে সহায় সম্বল শেষ করে অসহায় বাবা-মা এখন দিশেহারা। বর্তমানে অর্থাভাবে থেমে গেছে অধরার চিকিৎসা।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার হাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপন মজুমদারের একমাত্র মেয়ে অধরা মজুমদার। সে চৌমুহনী পৌরসভার গণিপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী।

স্বজনরা জানায়, অধরা মজুমদারের জন্মের পর থেকে তার ডান চোখ বন্ধ ছিল। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জন্মের সাত বছর পর ২০১৩ সালে অপারশন করলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় সে। ২০১৬ সালে ঠিক সেই চোখে আবার সমস্যা দেখা দিলে বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন অসহায় বাবা রিপন মজুমদার। কিন্তু দীর্ঘদিনের চিকিৎসা করেও কোনো সুফল মেলেনি। চিকিৎসার খরচ দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন তিনি। চলতি বছর অধরার চোখের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করতে বলেছেন। ভারতে গিয়ে এই চিকিৎসা করাতে খরচ পড়বে ৫-৬ লাখ টাকা। চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন জরুরি ভিত্তিতে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন ও উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলে যেকোনো মুহূর্তে অন্য চোখটিরও দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে।

অধরার বাবা রিপন মজুমদার আলোকিত স্বদেশের প্রতিবেদক নোমান খসরুকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছি। অসংখ্য অসহায় মানুষের জন্য নিউজ করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আজ আমিই অসহায় হয়ে সাহায্যের হাত পেতেছি। এক সময় আমার অনেক কিছু ছিল। একমাত্র মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি নিঃস্ব। আমার মেয়ে যখন চোখের যন্ত্রনায় কান্না করে তখন আমার কষ্টের সীমা থাকে না। আমি অসহায় বাবা হয়ে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মহিন উদ্দিন বলেন, অধরার বাবা রিপন মুজুমদারকে চৌমুহনীর ব্যবসায়ী সবাই চিনেন। তিনি বৈচিত্র্য নামের একটা স্টুডিও পরিচালনা করতেন। গণমাধ্যমেও কাজ করেছেন কিন্তু কখনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেনি। তবে একমাত্র মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ, মিনাহাজ আহমেদ জাবেদ, এবিএম জাফর উল্যাহ, আক্তার হোসেন ফয়সাল, বরকত উল্যাহ ভুলু ভাইসহ অনেকেই আছেন যারা এগিয়ে এলে চিকিৎসার ব্যয় কোনো বিষয় না।

গণিপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আলোকিত স্বদেশকে বলেন, অধরা মজুমদার প্রাক প্রাথমিক থেকেই দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমার এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে মেধাবী শিক্ষার্থী। প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। যদি চোখের চিকিৎসা হয় আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। আমি চাই সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় অধরার স্বপ্ন পূরণ হবে এবং অসহায় বাবা তার মেয়েকে চিকিৎসা করাতে পারবেন।

হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট পাপ্পু সাহা বলেন, রিপন মজুমদার দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে কাজ করে আসছেন। তার এক সময় চৌমুহনীতে ব্যবসা ছিল। বর্তমানে তিনি বিপর্যস্ত। তার মেয়ে অধরা ২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার চোখের চিকিৎসায় দ্রুত চেন্নাই নিতে হবে। আমি মনে করে সবাই তার মেয়ের পাশে দাঁড়ানো উচিত। যেনো মেয়েটি চোখের আলো ফিরে পায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাছরুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সমাজসেবা ৬টা রোগের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে এককালীন সরকারি সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন বিষয়ে সরকারি সহায়তার কোনো সুযোগ নেই। এর বাহিরে সমাজকল্যাণ পরিষদ রয়েছে। সেখানে আবেদন করলে চিকিৎসা খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া যদি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয় তাহলে সরকারি সেবার আওতায় আনা যাবে। তবে আমি মনে করি বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই টাকা কোনো বিষয় না এবং তাদের এগিয়ে আসা উচিত।