পুরুষের বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় এলো নতুন মশাল

ছবি সংগৃহীত

স্বাস্থ্য ডেস্কঃ বিশ্বের পুরুষ জনসংখ্যার ৭ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছে। এখন আশা করা হচ্ছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এই সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে।

ড. স্টিফেন ভ্যাসিলেস্কু বলছেন, তিনি এবং তার দল যে এআই সফটওয়্যার তৈরি করেছেন তা মারাত্মকভাবে বন্ধ্যা পুরুষদের অণ্ডকোষ থেকে নেওয়া নমুনায় উচ্চ প্রশিক্ষিত যে কোনো মানুষের চেয়ে হাজার গুণ দ্রুত শুক্রাণু শনাক্ত করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির (ইউটিএস) একজন বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মেডিকেল সংস্থা নিওজেনিক্স বায়োসায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ভ্যাসিলেস্কু বলেন, ‘সংগ্রহ করা নমুনাতে কী দেখা যাচ্ছে মানুষের পক্ষে তা বোঝার আগেই এই এআই প্রোগ্রামটি সম্ভাব্য স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু হাইলাইট করতে পারে।’

তিনি এবং তার সহকর্মীরা যে সিস্টেমটি তৈরি করেছেন তার নাম স্পার্মসার্চ। এই সিস্টেমটি এমন পুরুষদের সহায়তা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে— বীর্যপাতের পর যাদের বীর্যে শুক্রাণুর উপস্থিতি থাকে না। এই অবস্থাকে বলা হয় নন-অবস্ট্রাকটিভ অ্যাজুস্পার্মিয়া (এনওএ)। বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত ১০ শতাংশ পুরুষের এ সমস্যা রয়েছে।

এই ক্ষেত্রে সাধারণত অণ্ডকোষের একটি ছোট অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে পরীক্ষাগারে নেওয়া হয়। সেখানে একজন ভ্রূণবিশেষজ্ঞ নমুনায় স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু অনুসন্ধান করেন।

ল্যাবে টিস্যুটি বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করা হয়। যদি কোনও স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু পাওয়া যায় তবে সেগুলো বের করে ডিম্বাণুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

ড. ভ্যাসিলেস্কু বলেন, এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে ক্লান্তি এবং ভুল শুক্রাণু পর্যবেক্ষণের ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন যে— যখন একজন ভ্রূণবিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপের নিচে নমুনায় তাকান, তখন তিনি সেখানে আকাশে ছড়ানো নক্ষত্রের মতো করে অসংখ্য কোষ দেখতে পান।

ভ্যাসিলেস্কু আরও বলেন, এর মধ্যে রক্ত এবং টিস্যু থাকে। পুরো জিনিসটার মধ্যে মাত্র ১০টা শুক্রাণু থাকতে পারে, বাকি লাখ লাখ হয়তো অন্যান্য কোষ থাকতে পারে। এটা অনেকটা খড়ের স্তূপে সুঁই খোঁজার মতো।

তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে স্পার্মসার্চ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেখান থেকে স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু খুঁজে পেতে পারে। আর সঙ্গে সঙ্গে এর ছবি কম্পিউটারে আপলোড করে দেয়।

এভাবে কমপ্লেক্স টিস্যু নমুনা থেকে স্বাস্থ্যকর শুক্রাণু খুঁজে পাওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে ডা. ভ্যাসিলেস্কু এবং তার টিম এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এই জাতীয় হাজার হাজার ছবি দেখিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডির প্রজনন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. সারাহ মার্টিন্স দা সিলভা বলেন, শুক্রাণু খুঁজে বের করার এই গতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

‘যদি আপনার কাছে এমন কেউ থাকে যিনি ডিম্বাণু সংগ্রহ করেছেন এবং ইতোমধ্যে সেই ডিম্বাণু নিষিক্ত করা দরকার, তবে সেটা করতে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় থাকে না। তাই প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করা খুবই উপকারী হবে।’

গত চার দশকে শুক্রাণুর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার পর পুরুষের বন্ধ্যাত্বকে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। পুরুষের উর্বরতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দূষণ, ধূমপান, অপুষ্টি, অপর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।