ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির স্ত্রীর ইন্তেকাল

ছবি সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ও ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের সাবেক এমএলএ, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট মরহুম দবিরুল ইসলামের সহধর্মিণী আবেদা খাতুন হেনা ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি তিন ছেলে, নাতি-নাতনি ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার ছোট ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বার্ধ্যকজনিত কারণে আমার মা অসুস্থ ছিলেন। তাকে দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে মা মারা যান। সবার কাছে মায়ের জন্য দোয়া চাই।

জানা গেছে, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯ সালের ৪ জানুয়ারি প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে দবিরুল ইসলাম সংগঠনের সভাপতি (১৯৪৯-১৯৫৩) নির্বাচিত হন। সেই সময় তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। দবিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী দবিরুল ইসলামকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন। দবিরুল ইসলাম ১৯৫৬ সালে আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমবিষয়ক পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। জেলে পাকিস্তান সরকারের নির্মম নির্যাতনের কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন দবিরুল ইসলাম। এ অবস্থায় ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বঙ্গবন্ধুর এই ঘনিষ্ঠ সহচর। বিয়ের মাত্র ১০ বছরের মাথায় ভাষাসৈনিক এবং বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও বিশ্বস্ত সহচর দবিরুল ইসলামের মৃত্যুর পর চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ৪ সন্তানকে (এক মেয়ে ও তিন ছেলে) বড় করেন তার বিধবা স্ত্রী আবেদা খাতুন হেনা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মরহুম অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ দবিরুল ইসলামের স্ত্রী আবেদা খাতুন হেনা এক সাক্ষাৎকারে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার স্বামীর অসম্ভব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি তা নিজেই দেখেছি। বিয়ের ১০ বছরের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে কোলের শিশুদের নিয়ে করুন ও নিদারুণ দিন পার করেছি। এতো আন্দোলন সংগ্রাম করেও এখনও রফিক, বরকত, সালাম, জব্বারের মতো ভাষা সৈনিক হিসেবে কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি আমার স্বামী। মরার আগে যদি তার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।’ তার এই স্বপ্ন চিরদিন স্বপ্নই রয়ে গেলো। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই এ জগৎ ছেড়ে চলে গেলেন।

মরহুমার জানাজা ও দাফন আগামীকাল রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বামুনিয়া গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে সম্পন্ন হবে।