সানজিদ মাহমুদ সুজন, শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া দুই পক্ষ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে অন্তত শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বুধবার (২৫-জানুয়ারী) দুপুরে স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে কাজীর হাটে অবস্থিত দক্ষিণ ডুবলদিয়া আব্দুর রাজ্জাক হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এই সংঘর্ষ হয়। এসময় দু’পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।গ্রেফতার ২জন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আঃ রাজ্জাক হাই স্কুলের মাঠের বিভিন্ন জায়গায় হাতবোমা ও বোমার বিস্ফোরিত বিভিন্ন অংশ পড়ে আছে। এছাড়া দুই পক্ষ কাজীর হাটের বিভিন্ন পয়েন্টে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। তবে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এসময় লাঠিপেটা করে দু’পক্ষের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় এবং এক পক্ষের দুইজনকে আটক করে জাজিরা থানায় নিয়ে আসা হয়। আটককৃতরা হলেন নুর হোসেন কাজী(৫৫) এবং আমীর হোসেন মাদবর(৪৫)।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত কাজীর হাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নুর হোসেন কাজী এবং রুস্তম বেপারী গ্রুপের মধ্যে শত্রুতা চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় একটি মেয়েঘটিত বিষয় নিয়ে, বুধবার এই সংঘর্ষ হয় এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং একজনকে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
আহতরা হলেন, রুস্তম বেপারী গ্রুপের লিয়াকত কাজী(৪৫) মাথায় আঘাত, রুস্তম বেপারী(৫০) হাতে ও পায়ে সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত, সজিব বেপারী(২২) হাতে কোপ, সুজন বেপারী(২৮) মাথায় আঘাত এবং নুরুল ইসলাম বেপারী(৪২) পায়ে আঘাত। এছাড়া নুর হোসেন কাজী গ্রুপের নুরুল আমিন কাজী(৫৫) সারা শরীরে আঘাত, জুয়েল কাজী(২২) মাথায় আঘাত, মরণ মৃধা(২৫) মাথায় আঘাত, সুজন কাজী(২০) পায়ে আঘাত, নুর হোসেন কাজী(৫৫) পায়ে আঘাত এবং মনির কাজী(২৭) পায়ে আঘাত।
স্থানীয় কাউন্সিলর দবির হোসেন বেপারি বলেন, সকালে রুস্তম বেপারী আর নুর হোসেন কাজীর মধ্যে কথা তাদের বাড়ির মেয়ের বিয়ে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে পরে নুর হোসেন কাজীর বড় ছেলে মনির কাজী এবং ভাতিজা নুরুল আমিন কাজীর ছেলে কোরবান কাজী রুস্তম বেপারী এবং লিয়াকত কাজীকে আক্রমণ করে। যার ফলে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এছাড়া কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্যঃ গত সোমবার (২৩-জানুয়ারী) সকালে জাজিরার বিলাশপুর ইউনিয়নের স্থানীয় চেয়ারম্যান আঃ কুদ্দুস বেপারী ও ফারুক মাদবর গ্রুপের সাথে জলিল মাদবর ও সালেক মাদবর গ্রুপের মারামারির ঘটনায় প্রায় ৫ শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এছাড়া জাজিরা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ রাউন্ড শর্ট গানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। সেই ঘটনায় ৭ জন আহত ও ৬ জন আটক হলেও তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া সেই ঘটনায় কোন মামলা না করে সাধারণ ডায়েরি করা হয়।এমন কয়েকটি ঘটনা এ থানায় ক্রমান্ময়ে মিমাংসা হওয়ার কারনে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আইন পকেটে রাখার প্রবনতা বাড়ছে।সেই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আইনের প্রয়োগ।