মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ সুস্বাদু একটি ফসলের নাম কাউন।যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এক সময় মুন্সীগঞ্জে ব্যাপকভাবে চাষ হলেও বর্তমানে উন্নত জাত ফসলের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে কাউন।
স্বল্প খরচ,পরিবেশবান্ধব,সহজ চাষ পদ্ধতি ও পানি সাশ্রয়ী হওয়ার পরও শুধুমাত্র মানুষের অবহেলা-অনাদরে কাউনের চাষ আর নেই। ফসলটি যেন কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। কাউনের বৈজ্ঞানিক নাম ছিটারিয়া ইটালিকা গোত্র-গ্রামিনি।একমাস ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাউন চাষের দেখা মেলে টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানাড়ী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে।কাছে গিয়ে দেখা যায়,বিলুপ্ত প্রায় কাউন ফসলটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে বলছে,এখনো আমার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়নি।তবে আমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে,পারলে আমাকে রক্ষা কর।কথা হয় টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানাড়ী ইউপির সম্ভ্রান্ত কৃষক রিয়াজল বেপাড়ী(৫৫)সঙ্গে।তিনি জানান,আগে আমাদের এ অঞ্চলে অনেক জমিতেই কাউন চাষ হতো।এখন আর চোখে পড়ে না।ফসলটির চাষ পদ্ধতি সহজ,স্বল্প খরচ, পানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব।শুকনো জমিতে ঝুরঝুরে চাষের পর চৈত্র(এপ্রিল)মাসে বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হয়।আষাঢ়(জুলাই)মাসে ফসল ঘরে ওঠে।তিনি আরও জানান,মাঝে একবার নিড়ানি দিলেই হয়,সেচের প্রয়োজন হয় না।ফলন হয় বিঘা প্রতি ১০-১৫ মণ।বাজারে চাহিদা রয়েছে প্রচুর।তাছাড়া কাউনের শীষ ছিঁড়ে নিয়ে অবশিষ্ট গাছ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সারের ঘাটতি মেটানো সম্ভব।আবার কেউ কেউ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে।কাউনের ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক।জন্ডিস রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।পিঠা-পায়েস তৈরিতে এর কোনো জুড়ি নেই।হাসাইল বানাড়ী ইউপি সদস্য মোঃবাবু হাওলাদর জানান,লাভজনক,সুস্বাদু,পরিবেশবা ন্ধব,স্বল্প খরচে আবাদযোগ্য ও পানি সাশ্রয়ী কাউন নামের দেশি এ ফসলটি যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায় এজন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত।দেশীয় জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করতে হবে।তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটি।ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি এ দেশে গরীবদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়।তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়।কাউনের স্থানীয় জাত ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘তিতাস’ নামের একটি জাত আছে।তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল,আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।তিতাস জাতের গাছ মাঝারি লম্বা,পাতা সবুজ,কান্ড শক্ত।গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না।শীষ বেশ লম্বা, মোটা এবং রেশমী।বীজ মাঝারি আকারের। হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম।স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশী। জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে।তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন।খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়।দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস(মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়।দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়। কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি.রাখতে হবে।চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সে.মি. রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। কাউন চাষে সচরাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না।তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশী হয়।