জাজিরা থানার এসআই ফরিদের বিরুদ্ধে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ

সানজিদ মাহমুদ সুজন,জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর: জাজিরা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদের বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলায় ঘুষের বিনিময়ে স্বাক্ষীদের জবানবন্দি পরিবর্তন করে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সকল স্বাক্ষীদের স্বাক্ষী গ্রহণ না করে ঢালাওভাবে একই ধরনের জবানবন্দি নিজের ইচ্ছেমতো লিখে দেওয়ার প্রমান পাওয়া গেছে।গত (২০-ডিসেম্বর) এই ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি জাজিরা থানা থেকে অগ্রগামী করা হয়।

জানা যায়, জাজিরা থানাধীন পৌরসভার উত্তর বাইকশা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন(২৫) এর কাছ থেকে বিদেশ নেয়ার কথা বলে পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানাধীন পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পৈলান মোল্লার কান্দি গ্রামের বাসিন্দা সামাদ শেখ(৫৫) এবং জহির শেখ(৩২) কয়েক দফায় দুই লক্ষ টাকা নেয় গত প্রায় দুই বছর পূর্বে।

পরবর্তীতে মনির হোসেনকে একটি ভুয়া ভিসার কপিও প্রদান করে তারা। মনির বিষয়টি বুঝতে পেরে বিবাদীদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে জাজিরা থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক শালিসি বৈঠকও হয় উভয় পক্ষের মধ্যে। কিন্তু বিবাদীরা শালিসিতে বসে টাকা ফেরত দিবে বলে জানালেও পরে তারা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে।

যার ফলে গত সেপ্টেম্বর মাসে মনির হোসেন বাদী হয়ে শরীয়তপুর কোর্টে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩১, ৩৩ ও ৩৬ ধারায় ২৮৭/২২ নম্বরের একটি মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে কোর্ট থেকে জাজিরা থানায় পাঠালে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় জাজিরা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদকে। যার ফলে এসআই ফরিদ বাদী মনির হোসেনসহ স্বাক্ষীদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এমনকি টাকা লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলেও ওই সময় তিনি জানান।

কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় স্বাক্ষী আজিজুল মাদবর(৪৬), মোক্তার মাদবর(২৫), আকাশ বেপারি(২৪), আব্দুর রহিম মোল্লা(২৫) এবং আবু আলেম মাদবর(২৯)সহ সকল স্বাক্ষীদের জবানবন্দিতে তিনি লিখেন টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টি স্বাক্ষীরা জানে না। অথচ স্বাক্ষীরা স্পষ্টভাবেই টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেন তদন্তকারী এই কর্মকর্তার কাছে। এক্ষেত্রে বিবাদীদের থেকে ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষীদের জবানবন্দি পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেন মামলার বাদী মনির হোসেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী মনির হোসেন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফরিদের কথামতো আমার সকল স্বাক্ষীদেরকে আমি তার কাছে নিয়ে যাই এবং স্বাক্ষীরা তার কাছে আমার সম্মুখেই বিবাদীদ্বয় কর্তৃক আমার থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু আমি কোর্ট থেকে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে অবাক হয়ে যাই যে স্বাক্ষীদের জবানবন্দি তিনি পুরোটাই পালটিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্বাক্ষী আব্দুর রহিম মোল্লা, আকাশ বেপারী, মোক্তার বেপারিসহ সকল স্বাক্ষীরাই জানান তাদের অধিকাংশ স্বাক্ষীর সাথেই কথা বলেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফরিদ। যেই কয়জনের স্বাক্ষী নিয়েছেন তারা টাকা লেনদেনের বিষয়টি বলেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু এসআই ফরিদ তাদের জবানবন্দি পাল্টিয়ে দিয়েছে বলে দাবী করেন তারা।

এ ব্যাপারে এস,আই ফরিদকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি মানব পাচারের, আমি এ বিষয়ে কোন প্রমান পাই নি।আর টাকা পয়সার বিষয়টি ও সাক্ষিদের সাথে কথা বলার বিষয়টি এড়ায়ে গিয়ে বলেন,আমি তিন জন সাক্ষির কথাই উল্লেক করেছি,কোর্টে তারা টাকার বিষয়টি বললেই হবে।কিন্তু বস্তুত তার রিপোর্টে সে লিখেছে শাক্ষিরা টাকা পয়সার কথা অস্বিকার করেছে,বাস্তবতা হলো শাক্ষিগনের সাথে তার কোন কথাই হয় নি।
পরে সাংবাদিক ইমরান হোসেন স্বাক্ষি নিয়ে তার সামনে গেলে তিনি টাকার বিষয়ে পূনরায় অভিযোগ দায়ের করতে বলেন ও বিষয়টি নিয়ে দূঃখ প্রকাশ করেন।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার এ বিষয়টি জানা ছিলোনা। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।