পাবনার সাঁথিয়ায় তাঁত শিল্প বন্ধ, বিপাকে তাঁতিরা

আব্দুদ দাইন সাঁথিয়া, পাবনা;

পাবনার সাঁথিয়ায় শতশত তাঁত বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করেছ তাঁতী ও তাঁত শ্রমিকরা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্ব গতি, তাঁত উপকরণ, বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট ও নানামুখী সমস্যার বেড়া জালে বন্দী সাঁথিয়ার তাঁতপল্লীর তাঁতিরা। ঋণের টাকা পরিশোধ না করতে পেরে পৈত্রিক পেশা ছেড়ে বাঁচার তাগিদে অনেকে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। বেঁছে নিয়েছেন মুড়ি, কলা, পিঠা, তরকারি বিক্রি, চা-দোকান, রাজমিস্ত্রী, বাস শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশা।

সরেজমিন জানা যায় সাঁথিয়া উপজেলার তাঁত অধ্যুষিত গ্রাম পিপুলিয়া ও সাঁথিয়া। গ্রাম দুইটি সাঁথিয়া পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তগত। এই দু’টি গ্রামে ১০-১১ হাজার পরিবারের বাস। কারনে অকারণে লাফিয়ে লাফিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উর্ধ্ব মূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে তাঁত পণ্যের উপকরণের মূল্য ও বৃদ্ধি পাচ্ছে গাণীতিক হারে। প্রান্তিক তাঁতিরা সামাল দিতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের হাজারও তাঁত। ক্ষুদ্র তাঁত মালিকরা তাঁত বোর্ড থেকে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এটা যেন তাদের গলার কাঁটা।

পিপুলিয়া গ্রামের আবু সামা, আনছার আলী, রফিকুল ইসলাম সহ আরো অনেকে বলেন, কিছু দিন আগেও এ গ্রামে তাঁতের শব্দে মুখোরিত থাকত এলাকাটি। এখন শুনশান নিরবতা । এসব পরিবারে অভাব জেঁকে বসেছে। উপজেলার প্রায় ১৮ হাজার তাঁতের মধ্যে সামান্য সংখ্যক তাঁত ছাড়া বাঁকী সব বন্ধ হয়ে গেছে। যারা ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়েছেন তাদের তাঁতই সচল রয়েছে। সাঁথিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল মালেক মুন্সি, এবাদুল, শফিক, শহিদুল সহ অনেকে বলেন, আমাদের সবারই ৩-৪টি করে তাঁত ছিল। কাপড় বুনানো, সুতা, রং সহ বিভিন্ন মালা মালের অধিক দাম বেড়ে গেছে।

শ্রমিকের অভাব, উৎপাদিত লুঙ্গি গামছার দাম কম। এতে তাঁত মালিকের বিনিয়োগ খরচই ওঠে না। এছাড়া বিদ্যুৎ এর দাম বেশি। লোকসানের পরিমান বেড়ে যাবার কারনে শতশত তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অভাবের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। পৈত্রিক পেশা ছেড়ে ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ভ্রাম্যমান দোকান ও অন্য কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টার সাঁথিয়া শাখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা বসুদেব চন্দ্র দাস বলেন, এখানে প্রায় দুই বছর ধরে লিঁয়াজো অফিসারের পদশূন্য রয়েছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে ৫১টি সমিতির মাধ্যমে স্বল্পসুদে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা প্রান্তিক তাঁতিদের মধ্যে ঋণ দেয়া হয়েছে। আদায় হয়েছে প্রায় সোয়া দুই কোটি। অনাদায়ী রয়েছে ২ কেটি ৩০ লক্ষ টাকা। মাত্র দুইজন ফিল্ড সুপারভাইজারের দেখভালে সম্ভব হচ্ছে না ঋণ আদয়। কর্মচারী স্বল্পতার কারণে কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী। কর্মকর্তা আরো বলেন তাঁতিদের এখন দুর্দিন । কাপড় তৈরীর উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট, বিদ্যুৎ বিল বেশী। নানাবিধ সমস্যার কারণে সাঁথিয়া তাঁতপল্লীর তাঁত গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষি ভতুর্কির মতো সরকার যদি তাঁতশিল্পেও ভতুর্কি দিত তাহলে তাঁতী সম্পদায়ের উপকৃত হতেন।