ধামরাইয়ে সরিষার তেল তৈরিতে মেশিন, নেই আগের সেই ঘ্রাণ

ধামরাই (ঢাকা):

গরুর ঘানি দিয়ে সরিষা ভেঙে তেল তৈরি করা ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। ঘানিতে ভাঙা সরিষা তেলের চাহিদাও ছিল ব্যাপক। এখনো কমেনি সেই চাহিদা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কমে গেছে গরুর ঘানি।

আধুনিক এই যুগে সেই প্রাচীন ঘানি নয়, মেশিনে ভাঙা সরিষার তেলেই চাহিদা মেটাচ্ছেন গ্রাম-গঞ্জের মানুষ।

ধামরাই উপজেলায় এমন চিত্র রোজ দেখা যাচ্ছে। অথচ এক সময় এখানে অনেকগুলো গরুর ঘানি ছিল। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গরু দিয়ে কাঠের ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল তৈরি করা হতো। চাষিরা সরিষা ভেঙে ‘খাঁটি তেল’ উৎপাদন করতেন। সেই তেল ভোজ্য হিসেবে কিনে নিতেন মানুষ।

আগের দিনের গরুর ঘানির তেলে যে স্বাদ তা মেশিনে ভাঙা তেলের মধ্যে নেই বলে জানান অনেকে। এছাড়া বিভিন্ন দ্রব্যের মিশ্রণে তেল ভেজাল করা হয় বলেও জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে উপজেলার কাওয়ালীপাড়া বাজারে ভাম্যমান একটি টমটমে ওপরে বসানো হয়েছে সরিষার তেল ভাঙার ছোট শ্যালো মেশিন। এই মেশিনে ভাঙা তেল কিনতে গাড়ির কাছে ভিড় করেছেন ক্রেতারা।

মেশিনে তৈরি তেল সংরক্ষণের বিষয়ে আরিফ হোসেন বলেন, আমরা যে বোতলে তেল বিক্রি করছি তা ঘরে তিন-চার দিনে রেখে দিলে নিচে গাদগুলো শক্ত হয়ে বসে যাবে। এরপর তেলটা আরেকটি বোতলে সরিয়ে নিয়ে রোদে দিলে কমপক্ষে ৬ মাস ভালো থাকবে। যদি কয়েক মাস পরপর একটু রোদে দেওয়া যায় তাহলে এক বছরের বেশি সময় টিকবে।

তিন কেজি সরিষা থেকে প্রায় এক কেজি তেল বের হয়। প্রতিকেজি তেল আমরা ২৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। তেল বের করার পর সরিষার খৈল শুকিয়ে বিক্রি করি। সরিষার খৈল মাছ, মুরগি ও গরুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। প্রতি কেজি খৈল পাইকারিতে ৪০-৪৫ টাকা, খুচরায় ৫৫-৬০ টাকা বিক্রি করা হয়।

তিনি জানান, দুই লাখ ত্রিশ হাজার টাকায় পাবনা থেকে সরিষার তেলের মেশিনটি ক্রয় করেছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে সাড়া পেয়ে আসছি। বর্তমানে ব্যবসাও ভালো চলছে।

ক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, প্রিজারভেটিভ, কেমিক্যাল, রং আর ভেজালের ভিড়ে আরিফ হোসেনের ভ্রাম্যমাণ ঘানি তেলের গাড়ি। পথে পথে গাড়ি থামিয়ে সরিষা থেকে তৈরি হচ্ছে তেল। ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থেকেই দেখছেন তেল তৈরির প্রক্রিয়া। হাতের নাগালে উন্নতমানের ভেজালমুক্ত পেয়ে আমি দুই কেজি ক্রয় করেছি ।