ঈদের পর এবার ভোটের প্রস্তুতিতে আরও গতি বাড়াবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে মাঠের কর্মসূচি আরও জোরালো করার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। পরিকল্পনা সাজাতে জেলা, উপজেলা ও মহানগরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে জুলাই মাসজুড়েও অব্যাহত থাকবে শান্তি ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এর সঙ্গে থাকবে বিক্ষোভ মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচিও। মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি থাকবে শোকের মাস আগস্টে। সেপ্টেম্বর থেকে আবারও জেলায় জেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন জনসভা শুরু হবে। এই সময়ে নানা সভা-সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্রের পাশাপাশি তুলে ধরা হবে বিএনপি-জামায়াতের নানা ‘অপকর্ম’। এছাড়া সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের মাঠে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আরও সক্রিয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি অতীতের মতো নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রাখা হবে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন তো আমরা সেই কবে থেকে দেখছি। তাদের হরতাল-অবরোধও সেই কবে থেকেই চলছে। সেগুলোই তো এখনো উঠিয়ে নেয়নি। সুতরাং এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমরা আমাদের জনগণকে সতর্ক করছি। নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতাকে আরও জোরদার করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে বলেছেন। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াতের সময় তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতিসহ যেসব অপকর্ম করেছেন সেগুলো আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তৃতীয়ত, আমাদের সময়ে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলো আমরা আরও বেশি করে জনগণের সামনে তুলে ধরব।’

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনেও জয় পেতে নানা কর্মসূচি নিয়ে আগেভাগেই মাঠে নেমেছে দলটি। অন্যদিকে এতদিন নানা কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার পতনের একদফা নিয়ে মাঠে নামছে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। এদিকে বিএনপিকে শুরু থেকেই ফাঁকা মাঠ ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের কর্মসূচির দিন নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীনরাও। সামনের দিনগুলোতেও বিএনপিকে রাজপথে ফাঁকা ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। অতীতের ধারাবাহিকতায় নানা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, বিএনপির কর্মসূচির দিনে অতীতের মতো আমরাও মাঠে থাকব। এর সঙ্গে আরও কিছু কর্মসূচি দেওয়া হবে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এসব কর্মসূচি। তৃণমূল পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের কারণে মাঠ নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা চাঙা থাকবেন। তিনি আরও জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও শোকের মাস আগস্টে মাসব্যাপী কর্মসূচি থাকবে। সেপ্টেম্বর মাসের কর্মসূচি হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক। নানা ধরনের সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি সফর আবার শুরু হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, ‘সরকার উৎখাত, একদফা আন্দোলন-এগুলো তো বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে। কিন্তু তাদের এই কথাবার্তায় জনভিত্তি নেই। জনগণ তাদের এই ধরনের বক্তব্যকে সমর্থন করে না। তাদের ডাকেও সাড়া দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই মাঠে আছে। আওয়ামী লীগ মাঠের পার্টি, যে কোনো অপকর্ম, অরাজকতা হলে মাঠেই জবাব দেবে। বুকের রক্ত দেবে তবুও অপশক্তির কাছে হার মানবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে যাব। শেখ হাসিনার সরকার তাদের জন্য কী কী করেছে সেই বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরব। আর জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেব-২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত কী করেছে। তখনকার বাংলাদেশ কেমন ছিল, সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরব।’ তিনি আরও বলেন, আমরা জেলায় জেলায় যাব, জেলার নেতারা উপজেলায় যাবে, প্রতিটি জায়গায় নানা অনুষ্ঠান হবে। এভাবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরব।’

এদিকে বিএনপি জোটগতভাবে আন্দোলনের পথে হাঁটলেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ১৪ দলীয় শরিকদের দেখা মেলেনি। দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচিতেই তারা সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ঈদের আগে জোটের একটি বৈঠকের পরে ঢাকায় ও সাভারে সমাবেশ করেছে ১৪ দলীয় জোট। সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের মাঠে শরিকদের আরও সক্রিয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু সভা-সমাবেশ করার কথা ভাবছে তারা। এ মাস থেকেই এসব কর্মসূচি শুরু হবে। শরিকরা ওই সভায় জোট নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্রুত বৈঠকে বসার তাগাদা দিয়েছেন।

এদিকে আন্দোলন বা অন্য নানা ইস্যুতে আলোচনা না করায় ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও শরিক দলের নেতারা বলছেন, তারা বিএনপির আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রয়োজন হলে কিংবা প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানালে তারা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবেই মাঠের কর্মসূচিতে যাবেন। আওয়ামী লীগের আন্দোলনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। জোটের শরিকরা যার যার অবস্থানে আছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।

এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির সঙ্গে নানা কর্মসূচি নিয়ে শুরু থেকেই মাঠে আছে তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। বিএনপির কর্মসূচির দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথ বা এককভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এসব সংগঠন। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি সামনের দিনের আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবিলায় অতীতের মতো নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রাখা হবে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও।