রেখা মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কড়ালগ্রাসী তিস্তা নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
হটাৎ তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চিলমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলাধীন হরিপুর ইউনিয়নের লকিয়ারপাড়া,পাড়া সাদুয়া,মাদারীপাড়া, চর মাদারীপাড়া ও কারেনন্ট বাজার এলাকাসমূহের প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি গ্রামসহ শত শত একর আবাদী জমি।
সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙ্গন কবলিত লকিয়ারপাড়া, পাড়া সাদুয়া, মাদারীপাড়া, চর মাদারীপাড়া ও কারেনন্ট বাজার এলাকাসমূহের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে নদী তীরবর্তী মানুষের আর্তনাদে। তিস্তার নদী তান্ডব লীলায় লকিয়ারপাড়া গ্রামের ৩০টি বাড়ি, পাড়া সাদুয়া গ্রামের ৫০টি বাড়ি, মাদারীপাড়া গ্রামের ৫০টি বাড়ি এবং চর মাদারীপাড়া ও কারেনন্ট বাজার এলাকার ১২০টি বাড়িসহ মোট প্রায় ২৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। হঠাৎ করে নদীগর্ভে বাড়ি ভিটে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। ভাঙ্গন আতঙ্গে রয়েছে নদী তীরবর্তী অনেক মানুষ। কোন রকমে তাদের বাড়ি-ঘর ও গাছপালাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এ সময় ওই এলাকায় বাশ-ঝাড়, কবরস্থান, বৈদ্যুতিক খুটি, গাছপালা, বাড়ি-ভিটেসহ আবাদী জমি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ দিন থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথেই দেখা দেয় নদী ভাঙ্গনের তান্ডবলিলা। কয়েকদিনের ব্যবধানে পাড়া সাদুয়া এলাকার আশরাফ আলী, আ. কুদ্দুস, রুপ চাদ, সফিউর রহমান, সাইদুর মুন্সি, মহিজল হক, কুরবান আলী, রুস্তম আলী, জাহিদুল ইসলাম, মঞ্জু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মাদারীপাড়া এলাকার গনি মিয়া, সুবল দাস, রফিকুল ইসলাম, নয়া মিয়া, বাহার উদ্দিনসহ অন্তত ২৫০ জনের বাড়ি-ভিটেসহ আবাদী জমি ও গাছ-পালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অনেকের বাড়ী নদীতে ভেসে গেলেও পড়নের কাপড়টুকু ছাড়া অন্যকিছু সরাতে পারেনি তারা। ভাঙ্গন আতঙ্কে অনেকে তাদের বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছেন।
পাড়া সাদুয়া এলাকার ইউপি সদস্য মোস্তফা আলী, আতাউর রহমান, আকরাম আলী, আমিন মিয়া, আ. করিমসহ অনেকে জানান, গত ৫ দিন ধরে চলছে তিস্তা নদী ভাঙ্গনের তান্ডব লীলা। এভাবে নদী ভাঙ্গতে থাকলে আমরা কোথায় যাব, কি খাব? তা আমাদের চিন্তায় আসে না।
গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী কনা খাতুন,কাশিম বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণী ছাত্রী জেসমিন আক্তার ও করুনা আক্তার জানায়, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের তাদের বাড়ী ভেঙ্গে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে তাদের পরিবার। এ অবস্থায় তাদের লেখা-পড়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তারা।
৫নং পাড়া সাদুয়া ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোস্তফা আলী জানান,তার ওয়াডসহ লকিয়ার পাড়া থেকে কারেন্ট বাজার পর্যন্ত গত ৫ দিনে অন্তত ২৫০টি পরিবার ভিটে-বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন।নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।আরও কত বাড়ী নদীতে যাবে তাই নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কাশিম বাজার ও পাড়াসাদুয়া এলাকা পরিদর্শন করে উপরে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ স্বাপেক্ষে কাজ ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ করা হবে। তবে কারেন্ট বাজার এলাকায় ১ কি.মি ভাঙ্গন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগের বরাদ্দ এসেছে, বালুভর্তি জিও ব্যাগ গননা শেষে নদীতে ফেলা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই এলাকাসমুহের ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গণনা শেষে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু হবে।