আলোকিত স্বদেশ রিপোর্টঃ
ফেনীর বিজয়সিংহ দিঘীর পার্ক থেকে আটক করে শিক্ষার্থীদের থানায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। এ অবস্থায় অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ নিয়ে চিন্তিত তাদের অভিভাবকরা৷ কারণ থানা থেকে ছেড়ে দিলেও লোকলজ্জা এবং অভিভাবকদের কাছে হেয় হওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবক, সচেতন মহল ও আইনবিদরা। তারা বলছেন, পুলিশ চাইলেই কি পার্ক কিংবা বিনোদন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আটক করে থানায় নিয়ে আইনের মুখোমুখি করতে পারে? এটি তো মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ।
পুলিশ চাইলেই কি কোনও শিক্ষার্থীকে পার্ক থেকে তুলে বা আটক করে থানায় নিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘বিনা অভিযোগে কিংবা অপরাধে পুলিশ চাইলে শুধু শিক্ষার্থী নয়, কোনও নাগরিককে পার্ক থেকে তুলে আনতে পারে না। তবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও নাগরিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষার্থীদের বিজয়সিংহ দিঘীর পার্ক থেকে আটক করে থানায় আনা হয়েছিল। পরে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।’
শিক্ষার্থীদের পার্ক থেকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফয়েজুল হক মিলকী আলোকিত স্বদেশ কে বলেন, ‘বিনা অপরাধে পার্ক কিংবা যেকোনো স্থান থেকে শুধু শিক্ষার্থী কিংবা শিশু-কিশোর নয়, কাউকে আটক করতে পারে না পুলিশ। এটি আমাদের সংবিধান পরিপন্থী কাজ ও অপরাধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের কাজ অপরাধ দমন। অথচ অপরাধ দমন বাদ দিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশ
বিনোদন পার্কে অভিযানের নামে শিশু-কিশোরদের মানসিক নির্যাতন করেছে। এর আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। অথচ আইনে বলা আছে, অপরাধ ছাড়া কাউকে আটক করে থানায় নেওয়া যাবে না। এখন এসব শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে দিলো পুলিশ। এতে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা তৈরি হবে। এর দায়ভার পুলিশকেই নিতে হবে। কারণ পুলিশ শিশু অধিকার আইনের ধারা রীতিমতো লঙ্ঘন করেছে। ফলে ওই কিশোর-কিশোরীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য চাইলে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন অভিভাবকরা।’
মঙ্গলবার সকালে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ঘটনা জানতে চাইতেই কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় অভিভাবকসহ একাধিক বিশিষ্টজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , রবিবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের মহিপাল বিজয় সিংহ দিঘীর পাড়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১১ জন ছাত্রী ও ১৪ জন ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। এরপর গাড়িতে তুলে তাদের সদর থানায় নেওয়া হয়। সেখানে তাদের আটকে রাখার পর অভিভাবকদের ডেকে তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়। আটক শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগই শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। থানায় নেওয়ার পর তাদের লজ্জায় মুখ ঢাকতে দেখা গেছে। সামাজিক মর্যাদার ভয়ে তাদের চোখেমুখে ছিল ভীতি-আতঙ্ক।