লাইফস্টাইল ডেস্ক:
বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী নাজমুন নাহার এবার আফ্রিকা মহাদেশের দ্বীপদেশ মরিশাস ভ্রমণের মাধ্যমে ১৫৩ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন। এরপর তিনি অভিযাত্রা করবেনন সিল্ক রুটের দেশ উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান পর্যন্ত।
নাজমুন নাহার বাংলাদেশের পতাকাবাহী সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রম ১৫৩ দেশ ভ্রমণের বেকর্ড গড়া নাজমুন নাহার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইন্ডিয়ান ওশান অতিক্রম করে বিমানটি তখন আকাশে, আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছি নীলসমুদ্র ছুঁয়ে গেছে ঘাড় সবুজ একখণ্ড ভূমিকে। গভীর সমুদ্রের পেটের ভেতর সবুজ ঘেরা পাহাড়ি এ লীলাভূমি আমাকে মুগ্ধ নয়নে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে তার এ অপরূপ বৈচিত্র্যকে ছুঁয়ে দিতে। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে আমি ছুঁয়ে দিলাম আমার বিশ্বভ্রমণের ১৫৩তম দেশ মরিশাসের মাটি।
তিনি বলেন, আমার জীবনে বড় বড় অ্যাডভেঞ্চার পার হয়ে আসা সবটুকু শক্তি আর আত্মবিশ্বাসকে এক করে আমি বিশ্বের বাকি দেশে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আঁকি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমি মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বপ্ন দেখতে দেখতে উড়ে বেড়ানো প্রথম বাংলাদেশি।
নাজমুন নাহার বলেন, ইরাক, সান মারিনো এবং মরিশাস সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো অপূর্ব ইতিহাস সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির দেশ। মরিশাস যেন এক ইন্ডিয়ান ওশান এর মধ্যে এক স্বর্গ পুরের দেশ।
নাজমুন নাহার ৬ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে।
তারপর ৩১ জানুয়ারি ২০২২ বেঙ্গল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের সৌজন্যে নাজমুন নাহার ৫টি দেশ ভ্রমণের উদ্দেশে রওনা হন। করোনাকালীন কঠিন সময়ের মধ্যেও তিনি ১৫১তম দেশ হিসেবে ইরাক এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫২তম দেশ হিসেবে রিপাবলিক অব সান মারিনো ভ্রমণ করেন।
এ বছরের শুরুর দিকে ইরাক সফরের মাধ্যমে শুরু হয় নাজমুন নাহারের এবারের অভিযাত্রা। তিনি ইরাকের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এরবিল থেকে সোরান, বেখাল জলপ্রপাত, লালিশ, দুহোক, রাওয়ানদুজ ক্যানিয়ন, রোড গ্রাফিতি, হালগার্ড পর্বত, জোরাগভান উপত্যকা পর্যন্ত তিনি সফর করেছিলেন।
ইরাকের বিভিন্ন প্রদেশ ও দর্শনীয় স্থানে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি জটিলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেটাকে ম্যানেজ করে ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করেন। সুমেরীয় ও মেসোপটিয়াম সভ্যতার দেশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা।
এ ছাড়া তিনি রিপাবলিক অব সান মারিনোতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করেন। দুর্গের টাওয়ার, মধ্যযুগীয় বাজার, অলিম্পিক স্টেডিয়াম, রোকা গুয়াইতা এবং টোরে সেস্তা ভঢ়ড়দুর্গ টাওয়ার, সান পাওলো অ্যাপোস্টলো চার্চ, মাউন্ট টাইটানোর টাওয়ারের শীর্ষ থেকে অত্যাশ্চর্য দৃশ্য অবলোকন করেন যা ডালমাশিয়ান উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।
তারপর নাজমুন তার অভিযাত্রা শুরু করেন উত্তর মরিশাসের গ্র্যান্ড বে, পোর্ট লুইস, বেলে মার, ফ্লিক অন ফ্লাক, ইলোশেফ, ব্ল্যাক রিভার, মসুসে বে, ১৮ শতকের রামগুলাম বোটানিক্যাল গার্ডেন চলছে তার দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করা এবং বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে সে সব বিখ্যাত জায়গাগুলোর মধ্যে তুলে ধরা।
বাংলাদেশের পতাকা বহনের পাশাপাশি তিনি বহন করছেন নো ওয়ার অ্যান্ড পিস, সেভ দ্য প্ল্যানেট, স্টপ চাইল্ড ম্যারেজ, স্টপ সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা পৃথিবীতে। নাজমুন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে এভাবেই গৌরবের সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীর কাছে! তিনি ভ্রমণ করবেন বিশ্বের প্রতিটি দেশ।
২০০০ সলে ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তার প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়। ১ জুন ২০১৮ সালে ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর। দেশে-বিদেশে তিনি পেয়েছেন বহু সম্মাননা।
একজন আলোকিত নারী নাজমুন নাহার বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে এভাবে এগিয়ে যাক পৃথিবীর দেশে দেশে।