আমার বন্ধু এস কে দাস

ডা. সাঈদ এনাম

আমার ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক ফ্রেন্ড ছেলে বেলায় নাকি মাদ্রাসায় পড়েছে। গল্পটা সেদিন কি এক বিষয়ে যখন আমার কাছে পাড়লো। আমি সহাস্যে বললাম, ‘মজা লস..’। সে সিরিয়াসলি। আরে দোস্ত সত্যি। কাহিনীটা এমন,

বন্ধুটি ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের। মেডিকেল কলেজের প্রথম দিন থেকেই তার সাথে আমার বন্ধুত্ব। যদিও আমাদের দুজনের আবার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছিলো ভিন্ন। তথাপি সে ভিন্নতা আমাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারেনি।

অমুসলিম হওয়ার পরও মাদ্রাসায় তার পড়ার কাহিনীটি ছিলো চমৎকার। তাদের গ্রামে সে সময় কোন স্কুল ছিলো না। একটা স্কুল ছিলো তবে সেটা ছিলো প্রায় ১৫/২০ মাইল দূরে।

মাদ্রাসাই সেখানের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী সর্বজন শ্রদ্ধেয় তার বাবা এতো দূরে স্কুলে না দিয়ে  সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েই  লেখাপড়ার করাবেন।

সে মাদ্রাসায় ভর্তি হলো। সে ছিলো মাদ্রাসায় একমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাত্র। ধর্ম বাধা হয়ে দাড়ায়নি তার জ্ঞান অর্জনে। হুজুর’রা ও তাকে খুব আদর এবং যত্ন করে পড়াতেন। সে ছিলো তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী। ক্লাসে প্রথম না হয় দ্বিতীয় হতো।

ছেলে বেলায় মাদ্রাসার ক্লাসে সে হুজুরদের প্রায়ই বলতো, ‘হুজুর দোয়া করবেন, বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই..’। হুজুররাও তাকে যারপরনাই উৎসাহ দিতেন লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্যে।

তার জন্যে আলাদা ভাবে হিন্দু ধর্মীয় ক্লাসের ব্যবস্থা করতেন হুজুররাই। সেই ছেলে স্কুলের পাঠ শেষ করে একদিন সত্যি সত্যি চান্স পায় মেডিকেলে। তার হুজুরদের স্বপ্ন পূরণ হয়। সে চান্স পায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ।

ঢাকা মেডিকেলে চান্স প্রাপ্তিতে সেদিন তার মাদ্রাসার হুজুর ও তার সকল সহপাঠী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছিলো আনন্দের বন্যা।

বর্তমানে সে এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর (সহকারী পরিচালক) হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে কর্মরত আছে। সে সার্জারীতে এফ সি পি এস ও করছে।

আজো সে হুজুর দের কথা ভুলেনি। মাঝেমধ্যে সে তার মাদ্রাসায় যায়। হুজুরদের সাথে দেখা করে। তাদের ফ্রী চিকিৎসা দেয়।

তার নাম ডা. স্বাধীন কুমার দাস। সে আমার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্লোজ বন্ধু।

 

ডিএমসি, বিসিএস

সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি।