গাইবান্ধায় সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টিএসপি ও এমওপি সার

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

চলতি বোরো রোপন মৌসুমে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে গাইবান্ধায় ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার অনেক বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

তারপরও জেলার বিভিন্ন বাজারে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কোন মনিটরিং তেমন  চোখে পড়ার মতো নয়। তবে কৃষি অধিদপ্তর সারের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলাররা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। রসিদ চাইলে তার কাছে কোন সার বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। ডিলারদের কাছে এভাবে জিম্মি হয়ে তাঁরা (কৃষকরা) অসহায় বোধ করছেন।

জেলার ৭ টি উপজেলার বিভিন্ন বাজারের খুচরা সার বিক্রেতাগন জানান,  তাদের নিকট ডিলাররা সারের দাম বেশি রাখায় তারা বেশি দামে সার বিক্রি করছেন।

তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন উপজেলার একাধিক বিসিআইসি সার ডিলারগন সারের দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান , চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে বাজারে সারের সংকট তৈরি হয়েছে। আমন ও রবি মৌসুমে গাইবান্ধা

জেলায় আলু, ভুট্টা, ধানসহ ব্যাপক সবজির উৎপাদন হয়। এসব ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে জমিতে কৃষকরা টিএসপি, এমওপি, ডিএপি ও ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সহিদার রহমান জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর। কৃষকরা এখন জমি শেষ চাষের আগে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার ছিটিয়ে দিবেন। এরপর রোপন করবেন বোরো ধান। এছাড়া মাঠে রয়েছে ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর আলু, ৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর গম, ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর ভুট্টা ও ৮ হাজার ৬০০ হেক্টর শাক্সবজি। এতেও কৃষকরা সার ব্যবহার করছেন।

তিনি আরও জানায়,জেলায় চলতি জানুয়ারি মাসে ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন টিএসপি,৩ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন এমওপি,৬ হাজার ১০৭ মেট্রিক টন ডিএপি এবং ৮ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ডিলারদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন টিএসপি, ১ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন এমওপি, ২ হাজার ৯৩৩ মেট্রিক টন ডিএপি এবং ৪ হাজার ৯২২ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়েছে। এসব সার বিসিআইসির ১১১ এবং বিএডিসির ১১৮ জন ডিলারের মাধ্যমে জেলার কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। সরকার প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) টিএসপি সারের খুচরা মূল্য ১ হাজার

১০০ টাকা (২২ টাকা প্রতি কেজি), এমওপি প্রতি বস্তা ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা (১৬ টাকা কেজি) নির্ধারণ করে দিয়েছে।জেলার ৭ টি উপজেলার অনেক বড়, মাঝাড়ী ও প্রান্তিক কৃষক জানান, ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা দোকানে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না। তারা প্রকাশ্যে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) প্রতি কেজি ২২ টাকা স্থলে ৩০ টাকা ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ১৫ টাকার স্থলে ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তররে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. বেলাল উদ্দিন জানান, জেলায় সারের কোন সংকট নাই। তারপরও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।