পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। সকাল ১১টায় মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন শেষে ওই ট্রেনেই মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনে যাবেন তিনি। বিকালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত একাধিকবার যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত অন্তত ৬ বার ১০ কোচের একটি ট্রেনের ট্রায়াল হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়েছে এই রুটে। প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনে নেমে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ডা. কাজী ইউসুফ স্টেডিয়ামে এক জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই রেলে আমূল পরিবর্তন আসছে। ১০ অক্টোবর মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন উদ্বোধন করবেন তিনি। উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রুটে পুরোদমে যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক ট্রেন চালানো হবে। মোংলা বন্দরকে যুক্ত করা এই রেলপথ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমরা পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসব।
এদিকে নতুন রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘিরে মাওয়া ও ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন, স্টেশন চত্বর ও লাইনের দু’পাশ রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। যে ট্রেনটিতে প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিবৃন্দ চড়বেন, সেটিরও সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে গত কয়েকদিন আগেই। ব্রডগেজ ট্রেনটি ১০টি কোচ নিয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা যাবে। প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিবৃন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্রেনটির দুপাশে দুটি ইঞ্জিন এবং মাঝখানে দুটি পাওয়ারকার যুক্ত থাকবে।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, রেলওয়ে কর্মকর্তারা গত কয়েক দিন ধরে মাওয়া ও ভাঙ্গা স্টেশন পরিদর্শন করছেন। সেখানে অবস্থান করছেন বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। মাওয়া ও ভাঙ্গা রেল স্টেশন, রেল চত্বর সাজানো হচ্ছে। মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে মাওয়া স্টেশন চত্বরে। সেখানে অনুষ্ঠেয় সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন চলবে-একই সঙ্গে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী যত বার পদ্মা সেতু পরিদর্শন করতে গেছেন, ততবারই পদ্মা রেলসেতুসহ দুপাশের লাইন পরিদর্শন করেছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, মঙ্গলবার ট্রেন উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যে কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে। আর ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল করবে। রেললিঙ্ক প্রকল্পের কাজ ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর এই তিন ভাগে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ পদ্মা সেতুর চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে পদ্মা রেললিঙ্ক প্রকল্পে।
রেলওয়ে পরিবহণ ও অপারেশন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ট্রেন উদ্বোধনের সপ্তাহের মধ্যেই কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে ৫০টি কোচ। একই সঙ্গে এ পথে ট্রেন চালাতে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনসহ গার্ড, চালক এবং ট্রেন পরিচালনার সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। নতুন এ রুট দিয়ে মালবাহী ট্রেন সর্বোচ্চ গতি নিয়ে চলতে পারবে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে মালামাল নির্ধারিত স্টেশনে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
টুঙ্গিপাড়া যাবেন প্রধানমন্ত্রী : ফরিদপুরের জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বঙ্গবন্ধু ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরিবারের শহিদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন।