সরকার ৪৪ টাকা দরে চাল ও ৩০ টাকায় ধান কিনবে

চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৭ লাখ টন ধান ও চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৪৪ টাকা, প্রতি কেজি আতপ চাল ৪৩ টাকা ও প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা দরে কেনা হবে। গত বছর আমন মৌসুমে প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে ২ লাখ মেট্রিকটন ধান এবং প্রতি কেজি ৪২ টাকা দরে ৫ লাখ মেট্রিকটন চাল কিনেছিল সরকার।

এ বছর প্রতি কেজি ধান-চাল ২ টাকা করে বাড়িয়ে কেনা হচ্ছে। রোববার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এবং অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, খাদ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব, কৃষি সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আরও বলেন, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৬ লাখ ২০ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৫৩ হাজার টন গম মজুত আছে। সব মিলিয়ে সরকারি মজুত প্রায় ১৭ লাখ ৩০ হাজার টন চাল। তিনি বলেন, গত বোরো মৌসুমে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিকটন চাল ও ৪ লাখ মেট্রিকটন ধান কেনার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সংগ্রহ অভিযান শেষে দেখা যায়, ধান সংগ্রহ ২ লাখ মেট্রিকটন কম হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেশি।

ফলে বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও ২ লাখ মেট্রিকটন চাল ক্রয় করেছে। অর্থাৎ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টন চাল বোরো মৌসুমে ক্রয় করে সরকার। বৈঠকে বাড়তি ২ লাখ টন চাল ক্রয়ের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যে আরও ১ লাখ টন চাল গুদামে ঢুকবে। এছাড়া আরও ৩ লাখ টন চাল পাইপলাইনে আছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, বাজারে চালের দামের তুলনায় সরকারি পর্যায়ে বেশি। ফলে সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষক উপকৃত হলে তা সবার জন্য মঙ্গল। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভিয়েতনামে প্রতি টন চাল ৬৭০ ডলার দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে সেখানে প্রতি টন চাল মাত্র ৩২০ ডলারে বিক্রি হতো। তিনি বলেন, আমরা আলু, পেঁয়াজ ও সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সময় করতে পারছি না। মূল্য নির্ধারণ করেও তা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এটা আমাদের দুর্বল দিক। কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা আমাদের সহযোগিতা করছে না। মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তদারকি করতে গেলে তারা কোল্ড স্টোরেজ বন্ধ করে দেয়, সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মোটেও হাল ছাড়িনি। উৎপাদন দেখে কৃষি মন্ত্রণালয় আর বাজারটা দেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সুতরাং কারও দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কারণ পেঁয়াজ দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য, সংরক্ষণ করা যায় না। দেশে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। ২০০৯ সালে সবজির উৎপাদন ছিল মাত্র ৩০ লাখ টন। গত ১৫ বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজির দাম বাড়ছে।

তিনি বলেন, ন্যায্যমূল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে বিলম্ব করেছি। আলুও দ্রুত পচনশীল একটি কৃষিপণ্য। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা বাড়তি দামে বিক্রি করছে। তবে আশার কথা হলো-কৃষি বিজ্ঞানীরা আলু ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। আগামী দিনে আলু ও পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না।