লাইফস্টাইল ডেস্কঃ জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়। এটা একটা উপসর্র্গ, যা ইনফেকশন বা ইনফ্লামেশনের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এটি ৯৯ হলে এমনকি ৯৯.৯ হলেও সেটা জ্বর নয়। এটার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দরকার নেই। প্রায় সব ভাইরাল ফিভার সাত দিনে চলে যায়। সাত দিনের বেশি হলে আমাদের দেশে টাইফয়েড এবং টাইফাস বা রিকেটশিয়া ভাবা হয়।
তিন সপ্তাহের বেশি হলে সেটাকে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ধরা হয়। তারচেয়ে বেশি হলে এবং এতদিনে ক্লু স্পষ্ট না হলে সেটা অজানা জ্বর (পাইরেক্সিয়া অব আননোন অরিজিন-পিউও)। বেশিরভাগ ভাইরাল ফিভারের গা ম্যাজ ম্যাজ করা, সর্বাঙ্গে ব্যথা, কাজে কর্মে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ এবং অথবা হাঁচি কাশি, নাক ঝরা, ক্ষুধামন্দা এসবই লক্ষণ। প্রথমেই অনেক জ্বর, মাথা ধরা, চোখ মুখ লালচে হওয়া (বিশেষ করে বাচ্চাদের) ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ।
কাশি থাকলে শ্বাসনালির ওপর দিকের প্রদাহ, কাশির সঙ্গে বুকের ব্যথা, বুক আটকে এলে সেটা ফুসফুসের প্রদাহ বা নিউমোনিয়া হিসাবে ধরা হয়। ফোঁড়া হলে জ্বর থাকতে পারে তবে অনেক বেশি থাকলে সেটা অন্য কারণ বা লিভার কিডনি বা হার্ট (ইন্টারনাল অরগান)-এর ফোঁড়া।
* জ্বরের প্রকারভেদ
জ্বর প্রতিদিন একই মাত্রায় থাকলে বা ২৪ ঘণ্টায় এক ডিগ্রির বেশি তারতম্য না (১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হলে সেটা কন্টিনিউড ফিভার; সব ভাইরাল ফিভার এমন। টাইফয়েডও কন্টিনিউড ফিভার। জ্বর যদি দুই ডিগ্রির কম তারতম্য হয় আর স্বাভাবিকে না আসে সেটা রেমিট্যান্ট। আর যদি স্বাভাবিকে (base line) নামার পর আবার বাড়ে সেটা ইন্টারমিটেন্ট।
আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া ইন্টারমিটেন্ট ফিভার; দুই সপ্তাহ না গেলে ম্যালেরিয়া টিপিক্যাল ইন্টারমিটেন্ট হয় না। শরীরের কোথায়ও পুঁজ জমে থাকলেও ইন্টারমিটেন্ট হতে পারে। শীত করে কাপুনি দিয়ে (শিভারিং) জ্বর এলে ধরে নেওয়া হয় প্রস্রাবের রাস্তা বা পিত্তথলির রাস্তায় ইনফেকশন হয়েছে। ম্যালেরিয়ায়ও প্রচন্ড জ্বর আসে, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে।
জ্বরের প্রথমদিকেই গলা ব্যথা, গলায় লাল টনসিল হলে সেটা ফ্যারিন্জাইটিস বা টনসিলাইটিস। প্রথমদিকের আরেকটা ক্লু হলো রাশ বা দানা। জ্বরের প্রথমদিনেই দানা থাকলে সেটা চিকেন পক্স। এক্ষেত্রে একই জায়গায় বিভিন্ন স্টেজের দানা থাকবে। সাধারণত স্কারলেট ফিগারের দানা আসে দ্বিতীয় দিনে; এটা স্ট্রেপ্টকক্কাস দিয়ে ফ্যারিনজাইটিস/টনসিলাইটিসের সঙ্গে হয়। জ্বরের তৃতীয় দিনে দানা হয় স্মল পক্সে।
হামের দানা হয় চতুর্থ দিনে। এক্ষেত্রে থোকা থোকা দানার আগেই চোখ লাল হয়ে যায়, নাক দিয়ে পানি ঝরে, মুখ গহ্বরের মধ্যে কপলিক স্পট আসে। ৫ম দিন প্রায় মিলিয়ে যাওয়া দানা পাওয়া যায় টাইফাসে।
ডেঙ্গি জ্বরে দানা হয় ষষ্ঠ দিনে। জ্বর নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হয় বলে এটাকে বলে কনভালেসেন্স র্যাশ। কিছু কিছু জ্বরের স্বভাবগত বৈশিষ্ট আছে। ডেঙ্গিতে জ্বরের সঙ্গে থাকে দানা ও ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ)। চিকুনগুনিয়ায় দানার পাশাপাশি ব্যথা হয় অনেক। করোনা জ্বরের সঙ্গে গলা ব্যথা, তারপর কাশি এবং সর্বশেষে শ্বাস কষ্ট হয়।
* জ্বর নির্ণয়ে পরীক্ষা
প্রথম চারদিনে কিছু না করলেও হয়। এর মধ্যে লক্ষণ এসে যায়। বিশেষ করে ভাইরাল ফিভার বোঝা যায়। জ্বরও নামতে থাকে এবং উপসর্গ কমতে থাকে। এ সময় ডেঙ্গির জন্য NS1 antigen I CBC (TC DC PC ESR) করা যেতে পারে। লিভার সবচেয়ে বড় অঙ্গ বলে ধাক্কাটা আগে খায়, তাই SGOT/SGPT করা যেতে পারে। সাত দিনে জ্বর না গেলে ট্রিপল এন্টিজেন ও ব্লাড কালচার করতে হবে। ম্যালেরিয়ার টেস্ট যে কোনো সময় করা যায়। এ ছাড়া লক্ষণ দেখে পরীক্ষা করা যায়, যেমন- শ্বাসে কষ্ট ও কাশি থাকলে বুকের এক্সরে, প্রস্রাবের উপসর্গ মনে হলে ইউরিন রুটিন ও কালচার ইত্যাদি। তিন সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে আরও কিছু পরীক্ষা, বিশেষ করে টিবির টেস্ট করতে হয়।
* চিকিৎসা
প্যারাসিটামল জ্বর, শরীর ব্যথা, ম্যাজম্যাজ অস্বস্তির জন্য একমাত্র ওষুধ।
অবস্থা বুঝে দিনে ৪ বার পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। জ্বর ১০৩ ডিগ্রীর বেশি হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ (বরফ নয়) করতে হবে, বেশি করে পানি পান করতে হবে, গোসল করতে হবে। দরকার হলে স্যালাইন ইনজেকশন নেয়া যেতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। সাধারণত এন্টিবায়োটিক খাবার দরকার হয় না।