যে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল 

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়গুলো এই ছুটির ঘোষণাও দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তার ঠিক এক দিন আগে বৃহস্পতিবার ছুটি বাতিল করে ক্লাস চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিল। সেটি এখন আর হচ্ছে না। সপ্তাহিক দুদিন ছুটি শেষে রোববার থেকে যথারীতি ক্লাস হবে।

হঠাৎ ছুটি বাতিল করার কারণও ব্যাখ্যা করেন দীপু মনি। বলেন, ‘নির্বাচন এ বছর ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে হবে। তফসিল ঘোষণা হয়ে নির্বাচনী প্রচার ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই শুরু হবে। কাজেই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা নভেম্বরের শেষের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে।’

এ কারণে এবার শিক্ষাবর্ষ শেষ করার জন্য সময় কম জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে এবার গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করে শীতের ছুটি বাড়িয়ে দেব, যেটা ডিসেম্বরে হবে। আর গ্রীষ্মের ছুটিটা এখন আর থাকছে না। কাজেই এখন ক্লাস চলবে। নভেম্বরের শেষের মধ্যে যেন আমরা সব ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করতে পারি।’

শিক্ষা-সংক্রান্ত এ ধরনের সিদ্ধান্ত আগেভাগেই হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনেকে। তাদের যুক্তি, অনেকেই আগে থেকে ছুটি ঘিরে নানা ধরনের পরিকল্পনা করে থাকেন।

সরকারের পক্ষ থেকে যখন ছুটি বাতিলের ঘোষণা আসে তখন শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে দশম দিনের মতো বুধবার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষকরা। সকাল থেকে কর্মসূচি চলছিল। কিন্তু দুপুর ২টার অবস্থানস্থলে খবর আসে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এতে এক ধরনের আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। পরে বেলা সাড়ে ৩টার পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ওই কমিটি দুটির একটি হবে জাতীয়করণে অর্থসংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত বা অর্থনৈতিক; অপরটি হবে শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. কাওছার  বলেন, কমিটির প্রস্তাব করার পর তারা এতে শিক্ষক প্রতিনিধি রাখার দাবি করেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সাফ না করে দেন। এছাড়া তাকে শিক্ষকদের আরও কিছু ছোটখাটো দাবির কথা অবহিত করা হয়।

এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা, বাড়ি ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়। এটা শুধু জাতীয়করণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এক্ষেত্রে বলেন, নির্বাচনের আগে আর কিছু সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষকদের বক্তব্য হচ্ছে-তাহলে এ আলোচনায় কী পেলাম। আন্দোলনেও প্রাপ্তি শূন্য। তাই এখন বাড়ি ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাই আমরা। অন্তত ৫ মিনিটের সাক্ষাৎ চাই। তার আগে পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে।