কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
শাহাদাত হোসেন পান্নু (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের শাহাদাত হোসেন পান্নু (৩৮) এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ৬ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন- করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের মদন গ্রামের জুনায়েদ কবির, মাইন উদ্দিন, সজীব মিয়া, সোহেল ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম এবং করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মাজহারসহ অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে করোনা কালীন সময়ে ব্যবসা বাণিজ্যে যখন মন্দা চলছিলো তখন জুনায়েদ কবিরের (৪০) কাছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি অলিখিত চেক জমা দিয়ে সুদে ৮ লাখ টাকা নেন শাহাদত হোসেন পান্নু। করোনা সংকট কেটে গেলে জুনায়েদের কাছ থেকে নেয়া সব টাকা সুদসমেত ফেরত দেন পান্নু। পরে পান্নু তার দেয়া চেকটি ফেরত চাইলে জুনায়েদ তাকে বলে চেকটি খুঁজে পাচ্ছি না, পাওয়া মাত্রই চেকটি ফেরত দিয়ে দিব। দীর্ঘদিনের পরিচয় তাদের তাই সরল বিশ্বাসে বাড়ি চলে আসে পান্নু। পরে চেক ফেরত না দিয়ে গত ২ ফেব্রæয়ারি জুনায়েদ স্বাক্ষরিত একটি লিগ্যাল নোটিশ পান্নুর নিকট প্রেরণ করে। পান্নু লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে জুনায়েদের সাথে যোগাযোগ করলে তালবাহানা শুরু করে এবং হুমকি দেয়। পরে গত ২০ ফেব্রæয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে পান্নুকে তার বাড়ির সামনে থেকে জুনায়েদ কবির, মাইন উদ্দিন, সজীব মিয়া, সোহেল ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম এবং করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মাজহারসহ আরও ২ থেকে ৩জন জোর করে মোটর সাইকেলে তুলে করিমগঞ্জ থানায় নিয়া যায়। থানায় নিয়ে পান্নুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। পরে পান্নুর আত্মীয় স্বজন বিষয়টি জানতে পারে এবং থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে জুনায়েদ কবির ও উপ-পরিদর্শক মাজহার জোর করে পান্নু এবং তার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে পান্নুকে ছেড়ে দেয়।
ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেন পান্নু বলেন, আমার সাথে জুনায়েদের দেনাপাওনা শেষ। তার কাছে আমার অলিখিত চেক রয়েছে। সে আমার চেক ফেরত দেয়নি উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। আমি উকিল নোটিশের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে হুমকিও দেয়। পরে ২০ ফেব্রæয়ারি রাতে আমার বাড়ির সামনে থেকে আমাকে জোর করে জুনায়েদ কবির, মাইন উদ্দিন, সজীব মিয়া, সোহেল ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম এবং করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মাজহারসহ আরও ২ থেকে ৩জন থানায় নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী পান্নু বলেন, থানায় নিয়ে গিয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। আত্মীয় আমাকে ছাড়িয়ে নিতে আসলে একটি সাদা কাগজে আমার ও আমার আত্মীয় স্বজনদের স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। কিছুদিন পর করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মাজহারের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের স্বাক্ষরকৃত সাদা কাগজের বিষয়টি জানতে চাইলে উপপরিদর্শক মাজহার বলেন, “উপরের নির্দেশ আছে, সাদা কাগজের বিষয়ে কিছু বলা যাবে না এবং কিছু দেখানো যাবে না।”
ভুক্তভোগী পান্নু আরও বলেন, আমি ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। জুনায়েদ কবির ও উপপরিদর্শক মাজহার আমাদের স্বাক্ষরকৃত সাদা কাগজ দিয়ে আমাকে অন্যায়ভাবে হয়রানী করবে কিংবা আমার নামে মিথ্যা মামলা করতে পারে। সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কাছে আমার অনুরোধ আমাকে বাঁচান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে জুনায়েদের এলাকায় অনেক প্রভাব। সে বিভিন্ন অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। আমরা শুনেছি জুনায়েদ চোরাকারবারিও করে। ইন্ডিয়া থেকে বিভিন্ন পণ্য আনে। আর সুদের কারবার অনেক আগে থেকেই করে। নিরীহ মানুষকে টাকা পয়সা দিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। তার এই সুদের কারবারের চক্করে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে হয়ে পথে নেমে গেছে
অভিযুক্ত জুনায়েদ কবিরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা যারা সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের একটি প্রতিপক্ষ থাকে। পান্নুর কাছ থেকে ৬৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাই। তার বিরুদ্ধে আদালতে চেক ডিজওনারের মামলা দায়ের করা হয়েছে। উকিল নোটিশও পাঠানো হয়েছে।
থানায় নিয়ে গিয়ে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন মর্মে প্রশ্ন করা হলে জুনায়েদ কবির বলেন, পান্নুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম থানায়। তাই তাকে পুলিশ নিয়ে গেছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, এমন একটি অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হবে। অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে যে বিষয় উঠে আসবে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।