স্কটল্যান্ডের কাছে লজ্জার হারে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

স্পোর্টস ডেস্ক: ভালো বোলিংয়ে স্কটল্যান্ডকে আটকে রাখা গেল ১৪০ রানে। ব্যাটিং উইকেটে ১৪১ রানের লক্ষ্য আহামরি ছিল না। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লজ্জায় লাল বাংলাদেশ। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটা হতাশায় কাটলো বাংলাদেশের।

প্রথম পর্বের ম্যাচে ওমানের আমেরাত স্টেডিয়ামে রোববার স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে স্কটল্যান্ড করে ৯ উইকেটে ১৪০ রান। জবাবে বাংলাদেশ করতে পারে সাত উইকেটে ১৩৪ রান।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে বেশ ভালো করা সৌম্য সরকার মূল ম্যাচে হাটলেন পেছন পথে। ড্যাভের বলে ক্যাচ দেন বাউন্ডারি লাইনে মুনশির হাতে। এক চারে ৫ বলে ৫ রান করেন সৌম্য।

সাকিব এসে হাল ধরার চেষ্টা করেন। সঙ্গে তখন আরেক ওপেনার লিটন দাস। কিন্তু তিনিও পারেননি সৌম্যর মতো। হোয়েলের বলে বাউন্ডারি হাকাতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন মুনশির হাতে। সাত বলে তার রানও সৌম্যর সমান, ৫। ১৮ রানে দুই উইকেট পড়া বাংলাদেশকে তখন পথ দেখানোর চেষ্টায় দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিক। বলা ভালো ইনিংস মেরামতে।

বলের চেয়ে রান ছিল কম। তারপরও ভালো জুটি গড়াই ছিল মূল লক্ষ্য। নবম ওভারে লিস্ককে টানা দুই ছক্কা হাকিয়ে ম্যাচ জমে তোলার চেষ্টা করেন মুশফিক। রান রেট বাড়ানো ছিল তখন সময়ের দাবি। তবে তার আগে আম্পয়ার্স কলে বেচে যান তিনি। পরে ছিলেন সতর্ক।

ভালোই চলছিল সব। হঠাত করে সাকিবের বিদায়। ১২তম ওভারে গ্রেভসকে সামীনা ছাড়া করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন তিনি। দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ নেন ম্যাকলয়েড। দলীয় ৬৫ রানে পড়ে বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট। ২৮ বলে এক চারে ২০ রান করে ফেরেন সাকিব।

সাকিবের বিদায়ের পর আশা করা হচ্চিল জুটি জমবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের। কিন্তু দলীয় স্কোরে ৯ রান যোগ হতেই বিপদ ডেকে আনলেন মুশফিক। স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। চাপ বাড়ে বাংলাদেশ শিবিরে। ৩৬ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩৮ রান করে ফেরেন মুশফিক।

মাহমুদউল্লাহ-আফিফ জুটিতে ভরসা ছিল অনেকের। সে আশাতেও গুড়ে বালি। আস্কিং রান রেট তখন প্রায় দ্বিগুণ। ২৪ বলে ৪৯ রানের সমীকরণে ১৭তম ওভারে আসে ১২ রান। ১৮তম ওভারে ওয়াটের বলে ডেভের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন। ১২ বলে দুই চারে তার রান ১৮।

১২ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ৩২ রান। হোয়েলের ১৯তম ওভারে ছক্কা হাকাতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন নুরুল হাসান সোহান (২)। দারুণ ক্যারিশমায় ক্যাচ লুফে নেন ম্যাকলয়েড। একই ওভারে তৃতীয় বলে ছক্কা হাকিয়ে আশার সঞ্চার করেন মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় ম্যাকলয়েডের হাতে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২২ বলে তিনি করেন ২৩ রান।

শেষ ওভারে বাঙলাদেশের দরকার পড়ে ২৪ রান। বাকি তিন উইকেট নিয়ে দুরহ সমীকরণ মেলাতে পারেনি টাইগাররা। এই ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পারে ১৭ রান। ৫ বলে ১৩ রানে মেহেদী ও ২ বলে ৫ রানে সাইফউদ্দিন থাকেন অপরাজিত। লজ্জার হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৫ রানেই উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। কাইল কোয়েটজারকে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। ৭ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি স্কটিশ অধিনায়ক। বিশ^কাপে সাইফউদ্দিনের প্রথম উইকেট।

প্রথম উইকেট খোয়ানোর পর একটু সতর্ক স্কটল্যান্ড। জর্জ মানসে ও ম্যাথু ক্রসের ব্যাটে এগিয়ে যাছিল তারা। কিন্তু অষ্টম ওভারে স্কটিশদের পথ ভুলিয়ে দেন শেখ মেহেদী হাসান। ডানহাতি এই অফ স্পিনার দুজনকেই ফেরান। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া মেহেদী নিজের প্রথম ওভারেই শিকার করেন দুই উইকেট।

প্রথমে ১১ রান করা ম্যাথু ক্রসকে এলবির ফাদে ফেলেন তিনি। একই ওভারের পঞ্চম বলে বোল্ড করেন ওপেনার জর্জ মুনশিকে। ২৩ বলে ২৯ রান করেন স্কটিশ ওপেনার।

এরপর দৃশ্যপটে সাকিব আল হাসান। রিচি বেরিংটনকে (২) আফিফের ক্যাচ বানিয়ে স্পর্শ করেন টি টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্কাকে (১০৭টি)। একই ওভারে দেখান আবার তিনি চমক। ফেরান মাইকেল লিস্ককে। কোন রান না করা লিস্ক ক্যাচ দেন লিটনের হাতে। দুই উইকেটের সুবাদে নতুন রেকর্ড গড়েন সাকিব। মালিঙ্গাকে ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টিতে এখন সর্বোচ্চ উইকেট সাকিবের (১০৮)।

পরের ওভারে চমক দেখান মেহেদী হাসান। ১৪ বলে ৫ রান করা ম্যাকলয়েডকে করেন বোল্ড। ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অনেকটাই চাপে তখন স্কটল্যান্ড। এমন অবস্থায় দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ক্রিস গ্রেভস ও মার্ক ওয়াট। এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১০৪ রান পর্যন্ত। মার্ক ওয়াটকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। ১৭ বলে ২২ রান করেন তিনি। দলীয় ১৩১ রানে সর্বোচ্চ স্কোরার ক্রিস গ্রেভসকে সাজঘরে ফেরান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ২৮ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৪৫ রান করেন গ্রেভস।

শেষের দিকে নিজের দ্বিতীয় উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান। বোল্ড করেন জশ ড্যাভিকে। ৫ বলে ৮ রান করেন তিনি। শরিফ ৮ ও ব্রাড হোয়েল ১ রানে থাকেন অপরাজিত।

বল হাতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন মেহেদী হাসান। ৪ ওভারে ১৯ রানে তিনি নেন তিন উইকেট। সবচেয়ে ইকোনমি রেট ভালো ছিল সাকিবের। ৪ ওভারে ১৭ রানে তিনি নেন দুটি উইকেট। সেখানে মুস্তাফিজ এক মেডেনে ৪ ওভারে দেন ৩২ রান। পান দুটি উইকেটের দেখা। সাইফউদ্দিন ও তাসকিন নেন একটি করে উইকেট।