ধামরাইয়ে শাপলা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে শতাধিক পরিবার

মো. সাইফুল ইসলাম ,ধামরাই (ঢাকা) থেকে:

জাতীয় ফুল শাপলা বিক্রি করে  জীবিকা নির্বাহ করছে ঢাকা জেলার ধামরাই  উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার।

কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এ পেশায় কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের মানুষ এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

খাল-বিলের অপরুপ সুন্দর শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলও বটে। বর্ষায় শাপলার এই সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুন। মজাদার সবজি হিসেবেও খুব পুষ্টিসমৃদ্ধ। এখন শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও তরকারি হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র, খাল, বিল, পুকুর, ডোবায় শাপলা পাওয়া যায়। বিল পাড়ের এলাকার বেকার অনেক যুবক এ শাপলায় সবজির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি কাটাচ্ছেন নিজের সংসারের দৈন দশাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বন্যায় চক , খাল , বিল ,  পুকুর, ডোবায় উপজেলার  কয়েকশ দরিদ্র পরিবারের মানুষ এই শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিত। আর তাদের এ কাজে পরম বন্ধুর মতো সহযোগিতা করছে  কাঠ দিয়ে তৈরি ডিঙ্গি নৌকা। এতে একদিকে নিজেদের সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাচ্ছেন। অন্যদিকে চক ও বিলে জন্ম নিয়ে বিলেই পচে যাওয়া জাতীয় ফুল শাপলাকে সবজি হিসেবে করছেন অতি জনপ্রিয়।

গাংগুটিয়া  ইউনিয়নের  চক ও বিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে বউ বাজারে বিক্রি করতে এসে  রবিউল ইসলাম জানান, এ সময়ে একেক জনে কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মোঠা (৬০ পিস শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করে। ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন হাঁট বাজার থেকে পাইকাররা এখান থেকে শাপলা কিনে নিয়ে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন।

ঢাকা জজ কোর্টের  আইনজীবি মেহেদী হাসান বাদল  বলেন, চক , খাল , বিল , পুকুর, ডোবা  বিলের শাপলা তুলে বিক্রি করা  এই  মানুষগুলো ফেলনা  শাপলাকে জনপ্রিয় সবজি হিসেবে এগিয়ে নিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ঢাকার যাএাবাড়ীর পাইকার  মল্লিক বাবু জানান, ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বাথুলী বাজারে সপ্তাহে শুক্রবার ও মঙ্গলবার ভোরে  বিশাল পাইকারি বাজার বসে । সেই বাজারে  শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা কেনা যায়।

সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ২০ টাকা দরে কেনা হয়। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ৎ দাড়ি খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ি আড়ৎ-এ শাপলা বিক্রি করা যায় ৩৫ থেকে ৩৭  টাকা করে মোঠা। শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য।

গত কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাচ্ছেন।